বিষয়বস্তুতে চলুন

পাতা:বঙ্গদর্শন নবপর্যায় ষষ্ঠ খণ্ড.djvu/৩৬০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

GG e বঙ্গদর্শন । [ ৬ষ্ঠ বর্ষ, কাৰ্ত্তিক। ভাৰ যতদূর সম্ভব আমরাই জাগাইয়া তুলিয়াছি। আমরা জনসাধারণকে দোষ দিই যে, তাহারা দেশীয়শিল্পের আদর করে না, এ কথা পাকা শিল্পীর মত কথা নয় ; যে সত্য ভাবুক, সে জনসাধারণের অপেক্ষ রাখে না ; যে আসল ধৰ্ম্মাত্মা, সে যেমন রাজসিংহাসন তুচ্ছ গণে, ংসারের মান-অপমান, বিচার-অবিচার তার কাছে যেমন, খাটি শিল্পীরও আসন তেমনি অটল। যে শিল্পকে জনসাধারণ গড়িয়া তোলে, সে শিল্প ক্ষণভঙ্গুর—কিন্তু যে শিল্প জনসাধারণকে গড়িয়া তোলে, সেই শিল্পই শিল্প এবং সেইখানেই শিল্পীর মহত্ত্ব। আমরাই এই বহুবর্ষ ধরিয়া জনসাধারণের মন ইউরোপের ভ্রষ্টশিল্পের দিকে লইয়া গিয়াছি এবং আমরাই ইচ্ছা করিলে সেই মন ফিরাইতে পারি। বিলাতী শিল্পের মুফলটুকু সাপের মাথার মণি —দেশীয়ভাবের তাগা বাধিয়া তবে তাহার দিকে হাত বাড়াইও, নচেৎ মরিতে হইবে, এইটুকু বুঝিলেই আমাদের মঙ্গল। ইউরোপে শিল্পের কি অধঃপাত হইয়াছে, যদি আরও স্পষ্ট করিয়া বুঝিতে চাও, তবে একটা গ্ৰীকৃমূৰ্ত্তি, আর একটা আধুনিক মূৰ্ত্তি পাশাপাশি রাখিয়া দেখ, দেখিবে দুটার ভিতর আকাশপাতাল প্রভেদ। আধুনিকটা হুবহু মান্বষ, নাক-চো চুল-দাড়ি নিখুঁত, আর গ্ৰীকৃমূর্তি মামুষের মত হইয়াও ঠিক মানুষের সঙ্গে কতটাই না তফাৎ। একটা যেন শিল্পদেবতা, পুরুষোত্তমরূপে, বিরাজমান, তিলে তিলে উত্তম, আর আধুনিকটা সত্যপীরের মত মৰ্ম্মাস্তিকরূপে সত্য হইয়৷ 'সৰ্ব্বমত্যস্তগৰ্হিতম্ অতিশয় ভাল, লয় বাক্যকে সার্থক *করিতেছে আবার এই গ্রীকুমুৰ্বির সঙ্গে আর্য্যাবর্তের বুদ্ধ কিংবা বিষ্ণু অথবা কোন একটি ধ্যানমূৰ্ত্তি জুড়িয়া দাও এবং পার তো জাপানের নারামন্দির হইতে এক ৰোধিসত্ত্ব আনিয়া বসাও, দেখিবে তিনেতেই এক ধ্যানের প্রভাব বর্তমান।. তিনেরই গঠনপারিপাট্য এতই সমান যে, সহসা দেখিলে মনে হইবে, একটা শিল্প হইতে তিনেরই উৎপত্তি। এইজন্ত বৌদ্ধশিল্পে গ্ৰীকৃভাব দেখিয়া অনেক ইউরোপীয় পণ্ডিত স্থির করেন যে, আর্য্যশিল্প গ্রীসের কাছে এবং জাপানশিল্প আর্য্যাবর্তের নিকট ঋণী ; কিন্তু একই দেবতা ; তারই যে এই ত্রিমূৰ্ত্তি ; এ যে তিনই এক, একই তিন ; কেহ কাহারও কাছে ঋণী নয় ;– এ কথা ইউরোপকে বোঝান শক্ত। যে দেশের শিল্পী এখনও ধ্যানমূৰ্ত্তি গড়ে, সেই দেশের লোকই বুঝিয়াছে, জাপান বুঝিয়াছে এবং বুঝিয়া সে আপনার শিল্পের উপর একান্ত নিভর করিয়াছে; শিল্প-শিক্ষা করিতে সে বিলাতের মুখে ছুটে নাই ; জাপানিশিল্প আজও নিজত্বটুকু বজায় রাথিয়াছে বলিয়া জগতে তার স্থান আজ অতি উচ্চে । এখন কর্তব্য, হয় গ্রীকৃ পুরুষোত্তম সত্যপীররূপে ইউরোপে সিন্নি পাউন, জাপান জাপান লইয়া, পারেন তো রুষিয়া লইয়া থাকেন থাকুন ; আমাদের যাহা আছে, আমরা তাহ লইয়াই থাকি। " কথা উঠিতে পারে, আমাদের কিছু আর আছে কি ? সব যে গেছে। এটা কি সত্য ? যে ধৰ্ম্মবিশ্বাস লইয়া পুরাকালে আর্য্যাবর্তের শিল্পিকুল শ্রমকে শ্রমজ্ঞান করে নাই, যে বিশ্বাসের বলে সে একএকটা পৰ্ব্বত এক টুকরা-পাথর-জ্ঞানে কাটিয়া-কুটয় তাহ