পাতা:বঙ্গদর্শন নবপর্যায় ষষ্ঠ খণ্ড.djvu/৪১২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8ళి: ৰঙ্গদর্শন। [ ৬ষ্ঠ বর্ষ, অগ্রহায়ণ। এমন মনে করিয়া কাজ করিলে কাজ ভাল হয় কি মন্দ হয়, সে পরের কথা—কিন্তু ইহাতে সন্দেহ নাই যে, সে কথা মিথ্যা । সংসারে আমাদের সমুদয় সম্বন্ধেরই যে অবসান আছে, এত বড় সত্য কথা আর কিছুই নাই। প্রয়োজনের খাতিরে গালি দিয়া সত্যকে মিথ্যা বলিয়া চালাইলেও সে সমানে আপনার কাজ করিয়া যায় ;–সোনার রাজদণ্ডকেই যে রাজা চরম বলিয়া জানে, তাহারও হাতে হইতে চরমে সেই রাজদণ্ড ধুলায় খসিয়া পড়ে; লোকালয়ে প্রতিষ্ঠালাভকেই যে ব্যক্তি একমাত্র লক্ষ্য বলিয়া জানে, সমস্ত জীবনের সমস্ত চেষ্টার শেষে তাঁহাকে সেই লোকালয় একলা ছাড়িয়া চলিয়া যাইতে হয়। বড় বড় কীৰ্ত্তি লুপ্ত হইয়া যায় এবং বড় বড় জাতিকেও উন্নতির নাট্যমঞ্চ হইতে প্রদীপ নিবাইয়া-দিয়৷ রঙ্গলীলা সমাধা করিতে হয়। এ সব অত্য স্ত পুরাতন কথা, তবু ইহা কিছুমাত্র মিথ্যা নহে। সকল সম্বন্ধেরই অবসান হয়, কিন্তু তাই বলিয়া অবসান হইবার পূৰ্ব্বে তাহাকে অস্বীকার করিলে ত চলে না। অবসানের পরে যাহা অসত্য, অবসানের পূৰ্ব্বেত তাহা সত্য। বাহ যে পরিমাণে সত্য, তাহাকে সেই পরিমাণে যদি না মানি, তবে, হয় সে আমাদিগকে কানে ধরিয়া মানাইবে, নয় ত কে নোদিন কোনোদিৰ দিয়া মুদযুদ্ধ শোধ করিয়া লইবে। ছাত্র বিদ্যালয়ে চিরদিন পড়ে না, পড়ার . একদিন অবসান হয়ই । কিন্তু যতদিন বিদ্যালয়ে আছে, ততদিন সে ধদি প্লড়াটাকে যথার্থভাবে স্বীকার করিয়া লয়, তবেই পড়ার অবসানটা প্রকৃত হয়,—তত্ত্বেই বিদ্যালয় হইতে নিষ্কৃতি তাহার পক্ষে সম্পূর্ণ হয়। যদি সে জোর করিয়া বিদ্যালয় হইতে অবসর লয়, তবে চিরদিন ধরিয়া অসম্পূর্ণ বিদ্যার ফল তাহাকে ভোগ করিতে হয়। পথ গম্যস্থান নয়, এ কথা ঠিক ;–পথের সমাপ্তিই আমাদের লক্ষ্য, কিন্তু আগে পথটাকে ভোগ না করিলে তাহার সমাপ্তিটাই অসম্ভব হইয়া পড়ে । তবেই দেখা যাইতেছে, জগতের সম্বন্ধগুলিকে আমরা ধ্বংস করিতে পারি না, তাহীদের ভিতর দিয়া গিয়া তাহাদিগকে উত্তীণ হইতে পারি। অর্থাৎ সকল সম্বন্ধ যেখানে আসিয়া মিলিয়াছে, সেইখানে পৌছিতে পারি। অতএব, ঠিকভাবে এই ভিতর দিয়া যাওয়াটাই সাধনী—কোনো সম্বন্ধকে নাই বলিয়া বিমুখ হওয়াই সাধনা নহে। পথকে যদি বৈরাগ্যের জোরে ছাড়িয়া দাও, অপথে তবে সাতগুণ বেশি ঘুর থাইয়৷ মরিতে হইরে । জৰ্ম্মান মহাকবি গ্যয়টে তাহার ফাউষ্ট নাটকে দেখাইয়াছেন—যে ব্যক্তি মানবপ্রবৃত্তিকে উপবাসী রাখিয়া সংসারের লীলাভূমি হইতে উচ্চে নিভৃতে বসিয়া জ্ঞানসংগ্ৰহ করিতে প্রবৃত্ত ছিল, সংসারের ধুলার উপরে বহুজোরে আছাড় খাইয় তাহাকে কেমনতর শক্ত জ্ঞান লাভ করিতে হইয়াছিল। মুক্তির প্রতি অসময়ে অযথা ঘোভ করিয়া যেটুকু ফাকি দিতে যাইব, সেটুকু ত শোধ করিতেই হইবে, তাহার উপরে আবার ফঁাকির চেষ্টার জন্ত দণ্ড আছে। বেশি তাড়াতাড়ি করিতে গেলেই বেশি বিলম্ব ঘটয়া যায়। , বস্তুত গ্রহণ এবং বর্জন, বন্ধন এবং বৈরাগ্য, এই দুটাই সমান সত্য—একের, মধ্যেই অন্তটির বাস, কেহ কাহাকেও ছাড়ির