পাতা:বঙ্গদর্শন নবপর্যায় ষষ্ঠ খণ্ড.djvu/৪৫১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

নবন্ধ সংখ্যা। ] সৌন্দৰ্য্যৰোধ । 88% করিয়া আর মানি না। তার পরে কল্যাণবুদ্ধি • যেখানে যোগ দেয়, সেখানে আমাদের মনের অধিকার আরো বাড়িয়া যায়—সুন্দর-অসুন্দরের দ্বন্দ্ব আরো ঘুচিয়া ফু। সেখানে কল্যাণী সতী সুন্দর হইয়া দেখা দেন, কেবল রূপসী নহে । যেখানে ধৈর্য্য-বীৰ্য্য-ক্ষমা-প্রেম আলো ফেলে, সেখানে রংচঙের আয়োজন-আড়ম্বরের কোনো প্রয়োজনই আমরা বুঝি না । কুমারসম্ভবকাব্যে ছদ্মবেশী মহাদেব তাপসী উমার নিকট শঙ্করের রূপগুণবয়সবিভবের নিন্দা করিলেন, তখন উমা কহিলেন, “মমাত্র ভাবৈকরসং মন: স্থিতম্”—র্তাহার ' প্রতি আমার মন একমাত্র ভাবের রসে অবস্থান করিতেছে । সুতরাং আনন্দের জন্ত আর কোনো উপকরণের প্রয়োজনই নাই। ভাবরসে সুন্দর-অসুন্দরের কঠিনবিচ্ছেদ দুরে চলিয়া বায়। o তবু মঙ্গলের মধ্যেও একটা দ্বন্ধ আছে। মঙ্গলের বোধ ভালমন্দের একটা সংঘাতের অপেক্ষা রাখে । কিন্তু এমনতর দ্বন্দ্বের মধ্যে কিছুর পরিসমাপ্তি হইতে পারে না। পরিণাম এক বই দুই নহে। নদী যতক্ষণ চলে, ততক্ষণ তাহার দুই কুলের প্রয়োজন হয়; কিন্তু যেখানে তাহার চলা শেষ হয়, সেখানে একমাত্র অকুলসমুদ্র। নদীর চলার দিকৃটাতে দ্বন্দ্ব, সমাপ্তির দিক্‌টাফু দ্বন্দ্বের অবসান। আগুন জ্বালাইবার সময় দুই কাঠে ঘষিতে হয়, শিখা যখন জলিয়া উঠে, তখন দুই কাঠের ঘর্ষণ বন্ধ হইয়া যায়। আমাদের সৌন্দর্য্যবোধও সেইরূপ ইন্দ্রিয়ের সুখকর ও অসুখকর, জীবনের মঙ্গলকর ও অমঙ্গলকর, এই দ্বয়ের ঘূণের দ্বন্ধে ফুলিঙ্গবিক্ষেপ করিতে করিতে একদিন যদি পূর্ণভাবে জলিয়া উঠে, তৰে তাহার সমস্ত আংশিকতা ও আলোড়ন নিরস্ত श्ध्र । তখন কি হয় ? তখন দ্বন্দ্ব ঘুচিয়া-গিয়া সমস্তই সুন্দর হয়, তখন সত্য ও সুনার একই কথা হইয় উঠে। তখনই বুঝিতে পারি, সত্যের যথার্থ উপলব্ধিমাত্রই আনন্দ, তাহাই চরম সৌন্দৰ্য্য । এ কথাটাকে স্পষ্ট করিয়া বুঝাইতে পারিব কি না, জানি না, কিন্তু চেষ্টা করিয়া ন দেখিলে অপরাধু হইবে। - মানুষকে দুই কুল বাচাইয়া চলিতে হয় ; তাহার নিজের স্বাতন্ত্র্য এবং সকলের সঙ্গে মিল,—দুই বিপরীত কুল । ছটির মধ্যে একটিকেও বাদ দিলে আমাদের মঙ্গল নাই । স্বাতন্ত্রাজিনিষটা যে মানুষের পক্ষে বহুমুল্য, তাহা মানুষের ব্যবহারেই বুঝা যায়। ধন দিয়া, প্রাণ দিয়া নিজের স্বাতন্ত্র্যকে বজায় রাখিবার জন্ত মানুষ কিনা লড়াই করিয়া থাকে । 彎 e নিজের বিশেষত্বকে সম্পূর্ণ করিবার জন্ম সে কোথাও কোনো বাধা মানিতে চায় না। ইহাতে যেখানে বাধা পায়, সেইখানেই তাহার" বেদনা লাগে। সেইখানেই সে ক্রুদ্ধ হয়, লুব্ধ হয়, হনন করে, হরণ করে । কিন্তু আমাদের স্বাতন্ত্র্য ত অবাধে চলিতে পারে না। প্রথমত, সে যে-সকল মালমসলা, যে-সকল ধনজন লইয়া আপনার কলেবর গড়িয়া তুলিতে চায়, তাহদেরও স্বাতন্ত্র্য আছে ; আমাদের ইচ্ছামত কেবল গায়ের জোরে তাহাদিগকে নিজের কাজে লাগাইতে পারি না। তখন আমুদের স্বাতন্ত্র্যের সঙ্গে