৫৩৬ খাদ্যমুখ আছে বটে, কিন্তু কলিকাতাবাসী অমরোগীর পক্ষে সেটা বিশেষ একটা সুসংবাদ নহে, কাজেই মিষ্টরসে রসনা স্থতৃপ্ত হইয়াছে বলিয়া কাশীর গুণগান করিতেছি বলিলেও সত্যের অপলাপ হয়। কাশীর দৃপ্ত নয়নমনোরঞ্জন বটে,—রেলগাড়িতে বসিয়াই রাজঘাটষ্টেশনে না পৌছিতেই গঙ্গাবক্ষোবিলম্বী সেতুবক্সের উপর হইতে ক্রোশব্যাপী অৰ্দ্ধচন্দ্রাকৃতি যে ' বিচিত্র পুরী দেখা যায়, তাহাতেই প্রাণমনকাড়িয়া লয়। এরূপ দৃষ্ঠ সমগ্র জগতেও অতুলনীয়। পূর্ণিমারজনীতে দশাশ্বমেধঘাটে কুলে কুলে জল, সেই জলে অৰ্দ্ধপ্রোথিত “প্রস্তরমন্দিরের চাতাল হইতেও আবার এই রমণীয় দৃশু প্ৰাণ ভরিয়া দেখিয়াছি। জ্যোৎস্নারাত্রে জাহ্লবীসলিলসঞ্চারী নৌকা হইতেও এই দৃপ্ত নয়নগোচর হইয়াছে। কাশীপ্রবেশকালে এই দৃপ্ত প্রাণমন অধিকার করে এবং ইহারই প্রভাবে সমস্ত মধুময় হইয়া, উঠে , অগণিত মন্দিরচুড়, পাথরের দ্বিতল, ত্রিতল, চেীতল ভবন, ভিত্তিগাত্রে বিচিত্র চিত্রাবলী, গোটা-পাথর-মোড় গলিরাস্ত', ' কোথাও উচ্চ, কোথাও নিম, গঙ্গাতটে যেন গঙ্গাগৰ্ভ হইতে উত্থিত হইতেছে এরূপ সুরম্য অত্যুচ্চ অট্টালিকাশ্রেণী, অসংখ্য পাষাণসোপানশ্রেণী, আর পুরীর পাশ দিয়া বাকিয়া ভাগীরথী কুলকুলাবে বহিতেছেন, এ সমস্তই কাশীর দৃপ্তকে লোভনীয় করিয়া তুলিয়াছে। কিন্তু এই মনোলোভী পুরশোভা দেখিয়াই ত মনে এইরূপ মুখের ফোয়ার খেলার কথা নছে, আরও ত অনেক দৃেশ অনেক সুন্দর সঁহৰু, স্বরম, হৰ্ম্ম, পুণ্যবতী স্রোতস্বতী বঙ্গদর্শন । [ இ' বর্ষ, ফাঙ্কন দেখিয়াছি, কৈ আর কোথাও ত মনে এরূপ ভাবের উদয় হয় নাই। তাই মনে হয়, বৈদিক ঋষি, পুরাণবর্ণিত রাজা প্রভৃতি প্রাচীনকালের মহাপুরুষগণ হইতে আরম্ভ করিয়া এই ঘোর কলিকালে ত্রৈলঙ্গস্বামী, ভাস্করানন্দস্বামী, বিশুদ্ধানন্দস্বামী প্রভৃতি মহাপুরুষগণ পৰ্য্যন্ত যে সকল সিদ্ধপুরুষ এই পবিত্র পুরীতে বিচরণ করিয়াছেন, তাহাদের চরণরজ এই পুরীর প্রত্যেক ধূলিকণার রেণুতে রেণুতে মিশ্রিত রহিয়াছে, সেই চরণরেণুর স্পর্শে স্পর্শে আমাদের হৃদয়মন বিমল শাস্তিতে ভরিয়া যায়, প্রাণে কেমন একটা বৈরাগ্যের ভাব আসে, পুণ্যভূমি ছাড়িতে চোখে জল আসে, হৃদয়ে শূন্ততার অমুভব হয় ;— আমরা স্থলদৃষ্টিতে বুঝিয়া উঠিতে পারি না, কেন এমন হয় ? 聯 ੱਚੋਂ ਬਾਂ লেখকের আজ কাশীবাসের শেষদিন। সায়াহু উপস্থিত, দশাশ্বমেধঘাটে কষ্টিবেদিকায় আসীন হইয়া কেহ সাধুসন্ন্যাসীর সহিত ধৰ্ম্মালাপে ব্যাপৃত, কেহ - সন্ধ্যাবন্দনাদিতে রত ; কাঠবেদিকার এক পাশে ক্রিয়াকাণ্ডহীন নব্যতন্ত্রের লেখক বিষঃমনে বসিয়া আছেন। স্বৰ্য্যাস্তকালের আকাশের রক্তিমরাগ দেখিহুত দেথিতে বিলীন হইল, গঙ্গাতটে, গঙ্গাজলে, পরপারবত্তী বনানীমধ্যে অন্ধকার ঘনাইয়া আসিল, লেখকের হৃদয়ও কি যেন কি-এক অব্যক্ত বিষাদে ভরিয়া গেল, এই শান্তিপবিত্রতানিলয় পুণ্যনিকেতুলু ছাড়িয়া যাইতে হইবে বলিয়া হৃদয় অবসন্ত হইয়া পড়িল। আত্মতত্ত্ববিহীন জনের পক্ষে ' পশুর স্তায় এই মুকশোকই একমাত্র সম্বল। শ্ৰীললিতকুমার বন্দ্যোপাধ্যায়।