পাতা:বঙ্গদর্শন নবপর্যায় সপ্তম খণ্ড.djvu/৫৫৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৫৩২ ভেদবৈচিত্র্যের দ্বারা কেবলি আহত প্রতিহত * - হইতেছে ; সেই ভেদের মধ্যেই প্রেমের দ্বারা তিনি আপনার অদ্বৈতস্বরূপ প্রকাশ করিতেছেন। গ্রেম যদি সমস্ত ভেদের মধ্যেই সম্বন্ধ স্থাপন না করিত তবে অদ্বৈত কাহাকে অবলম্বন করিয়া আপনাকে প্রকাশ করিতেন ? জগৎ অপূর্ণ বলিয়াই তাহ চঞ্চল, মানবসমাজ অপূর্ণ বলিয়াই তাহা সচেষ্ট, এবং আমাদের আত্মবোধ অপূর্ণ বলিয়াই আমরা আত্মাকে এবং অন্য সমস্তকে বিভিন্ন করিয়াই জানি। কিন্তু সেই চাঞ্চল্যের মধ্যেই শাস্তি, দুঃখচেষ্টার মধ্যেই সফলতা এবং বিভেদের মধ্যেই প্রেম। অতএব এ কথা মনে রাথিতে হইবে পূর্ণ তার বিপরীত শূন্যতা ; কিন্তু অপূর্ণতা পূর্ণতার বিপরীত নহে, বিরুদ্ধ নহে, তাহ পূর্ণতারই বিকাশ। গান যখন চলিতেছে যখন তাহ বঙ্গদর্শন। ৭ম, বর্ষ, ফাঙ্কন, ১৩১ 8 e t f নীয়তায় নিমগ্ন করিয়া দিতেছে।” সেই জন্ত আকাশ কেবল মাত্র আমাদিগকে বেষ্টন করিয়া নাই তাহা আমাদের হৃদয়কে বিশ্বফারিত করিয়া দিতেছে ; আলোক কেবল আমাদের দৃষ্টিকে সার্থক করিতেছে না তাহ আমাদের অন্তঃকরণকে উদ্বোধিত করিয়া তুলিতেছে এবং যাহা কিছু আছে তাহা কেবল আছে মাত্র নছে, তাহাতে আমাদের চিত্তকে চেতনায়, আমাদের আত্মাকে সত্যে সম্পূর্ণ করিতেছে। যখন দেখি শীতকালের পদ্মার নিস্তরঙ্গ নীলকান্ত জলস্রোত পীতাভ বালুতটের নি:শব্দ নির্জনতার মধ্যদিয়া নিরদেশ হইয়ু যাইতেছে— তখন কি বলিব, এ কি হইতেছে! নদীর জল বহিতেছে এই বলিলেই ত সব বলা হইল না— এমন কি, কিছুই বলা হইল না। তাহার আশ্চৰ্য্য শক্তি ও আশ্চর্য্য সৌন্দর্য্যের কি বলা সমে, আসির শেষ হয় নাই তখন তাহা সম্পূর্ণ হইল! সেই বচনের অতীত পরম পদার্থকে গান নহে বটে কিন্তু তাহ গানের বিপরীতও নছে, তাহার অংশে অংশে সেই সম্পূর্ণ গানেরই আনন্দ তরঙ্গিত হইতেছে। এ সহিলে রস কেমন করিয়া হয় ? রসো ৰৈ সঃ। তিনিই যে রসস্বরূপ। অপুর্ণকে প্রতি নিমেযেই তিনি পরিপূর্ণ করিয়া তুলিতেছেন বলিয়াই ত তিনি রস। তাহাতে করিয়া সমস্ত ভরিয়া উঠতেছে, ইহাই রসের আকৃতি, ইহাই রসের প্রকৃতি । • সেই জন্যই জগতের প্রকাশ আনন্মরূপমমৃতং-ইহাই আনন্দের রূপ, ইহা আনন্দের অমৃত রূপ। § সেই জন্তই এই অপূর্ণ জগৎ পৃষ্ঠ নহে, মিথ্যা নহে। সেই জন্তই এ জগতে রূপের মধ্যে অপরূপ, শব্দের মধ্যে বেদন, দ্রাণের মধ্যে ব্যাকুলত আমাগিকে কোন অনিৰ্ব্বক্ষ সেই অপরূপ রূপকে, সেই ধ্বনিহীন সঙ্গীতকে, এই জলের ধারা কেমন করিয়া এত গভীরভাবে ব্যক্ত করিতেছে। এ ত কেবলমাত্র জল ও মাটি—“মৃৎপিণ্ডে জলরেখয় বলয়িতঃ”— কিন্তু যাহা প্রকাশ হইয় উঠতেছে তাহ কি ! তাছাই আনন্দরূপমমুতম্ তাহাই আননের অমৃতরূপ। আবার কালবৈশাখীর প্রচণ্ড ঝড়েও এই নদীকে দেপিয়াছি। বালি উড়িয়া স্বৰ্য্যাস্তের বৃক্তচ্ছটাকে পাণ্ডুবৰ্ণ করিয়া তুলিয়াছে—কা হত কালোঘোড়ার মসৃণ চৰ্ম্মের মত নদীর জল রহিয়া রহিয়া কাপিয়া কাপিয় উঠতেছেপরপারের স্তন্ধ তরুশ্রেণীর উপরকার আকাশে একটা নিম্পদ আতঙ্কের বিবর্ণতা ফুটিয়া উঠিয়াছে, তারপরে সেই জলস্থল আকাশের