পাতা:বঙ্গ গৌরভ - জলধর সেন.pdf/১৩২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

§ Wර් বঙ্গ-গৌরব মাদ্রাসায়* প্রথম ইংরেজি শিক্ষা প্রবর্তিত হয়, তখন মুসলমান সমাজ হইতে তাহার বিরুদ্ধে রীতিমত অভিযান সৃষ্টি হইয়াছিল বলিলেও অত্যুক্তি হয় না। তখন ইংরেজশাসনের মাত্ৰ শৈশবাবস্থা। ইংরেজি শিক্ষা কোরানানুমোদিত নহে, সুতরাং ধৰ্মহানিকর, এই ধারণার ঘন-কুজ্বটিকায় তখনও চারিদিক পূর্ণ। এই সকল বাধাবিপত্তি কাটাইয়া অল্পদিনেই মেধাবী আবদুল লতিফ ইংরেজি শিক্ষায় সুনাম অর্জন করেন। তঁহার দেখাদেখি এক এক করিয়া আরও তিন চার জন মুসলমান যুবক ইংরেজি শ্রেণিতে পড়িতে আরম্ভ করিলেন। বিদ্যালয় ছাড়িয়া কর্মজীবনে প্রবেশ করিলে তঁহার খ্যাতি ও প্রতিপত্তি প্রতিদিন বৃদ্ধি প্রাপ্ত হইতে লাগিল। তিনি ক্রমশ মুসলমান সমাজের নেতৃগণের শীর্ষস্থান অধিকার করিলেন। প্রথম জীবনে আবদুল লতিফ ঢাকা গভর্নমেন্ট স্কুলে সহকারী শিক্ষকরূপে কাৰ্য করেন। এবং ক্রমশ কলকাতা মাদ্রাসার আরবি ও ইংরেজি অধ্যাপকের পদে উন্নীত হইয়াছিলেন। ১৮৪৯ খ্রিস্টাব্দে তিনি আলিপুরের ডেপুটি ম্যাজিষ্ট্রেট” পদে নিযুক্ত হন। চারি বৎসর গভর্নমেন্টের গোচর করিয়া দেশের প্রভূত উপকার সাধন করেন। তিনি এবং আরও কয়েকজন দেশীয় উচ্চপদস্থ রাজকর্মচারীর চেষ্টায় গভর্নমেন্ট এ বিষয়ে অবহিত হন ও সার অ্যাসলি ইডেন নীলকরদের অত্যাচার দমনের ব্যবস্থা করিতে থাকেন। ১৮৫৪ খ্রিস্টাব্দে সাতক্ষীরা হইতে তিনি হুগলি জেলার দসু্য-তস্কর-প্ৰপীড়িত জাহানাবাদ মহকুমায় বদলি হন। এইস্থানে পাঁচ বৎসরকাল থাকিয়া এই সকল অরাজকতা সম্পূর্ণভাবে দমন করিয়া তিনি বিশেষ যশস্বী হন এবং সরকারের নিকট প্রশংসা লাভ করেন। তঁহার কাৰ্যদক্ষতার পুরস্কার স্বরূপ ১৮৫৯ খ্রিস্টাব্দে তাহাকে আলিপুর সুবারবন পুলিশ আদালতের ম্যাজিষ্ট্রেট পদে নিযুক্ত করা হয়। তিনি একবার অস্থায়ীভাবে কলিকাতার প্রেসিডেন্সি ম্যাজিষ্ট্রেটের পদও লাভ করেন এবং তৎপর ১৮৭৭ খ্রিস্টাব্দে শিয়ালদহে পুলিশ ম্যাজিষ্ট্রেটরূপে বদলি হইয়া সাত বৎসর ঐ পদে আসীন থাকিয়া ৮০০ পর্যন্ত বেতন প্রাপ্ত হন। ইতিপূর্বে কোনও দেশীয় ডেপুটি ম্যাজিষ্ট্রেট এত অধিক বেতন পান নাই। তিনি এরূপ সুনাম অর্জন করেন যে সাহেবগণও তাহার নিকট হইতে সাহেব বিচারকের নিকট মামলা লইয়া যাইবার দাবি করিতেন না। তাহার ছত্রিশ বৎসর কার্যকালের মধ্যে তিনি মাত্র চার মাস অসুস্থতা নিবন্ধন ছুটি লইয়াছিলেন। তাহার চাকুরিকালে তিনি তিন বার বঙ্গীয় ব্যবস্থাপক সভার (Legislative Council) সভ্য নিযুক্ত হন। ভারতের সমগ্র মুসলমান সমাজে তিনি প্রথম এই সম্মানের অধিকারী হন। লর্ড এলগিন তঁহাকে ১৮৬৩ খ্রিস্টাব্দে কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘ফেলো।” মনোনীত করেন। যাহারা সর্বপ্রথম জাস্টিস অব দি পীস” নিযুক্ত হন তিনি তাঁহাদের অন্যতম। তাহার এই সম্মান কেবল কলিকাতাতেই নিবদ্ধ ছিল না-তিনি বাংলা, বিহার ও উড়িষ্যার জন্য এই সম্মান প্রাপ্ত হন (১৮৬৫ খ্রিঃ) {