পাতা:বঙ্গ গৌরভ - জলধর সেন.pdf/১৪৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

মতিলাল ঘোষ দেশ ও জাতিকে বড় করিবার জন্য যাহারা নিজের জীবন উৎসর্গ করিয়াছিলেন মতিলাল ঘোষ তাঁহাদের মধ্যে অগ্রণী ছিলেন। ১৮৪৭ খ্রিস্টাব্দের ২৬ অক্টোবর বৃহস্পতিবারে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। সে আজ বহুদিনের কথা ; দেশের অবস্থা তখন কিরূপ, আজিকার অবস্থা দেখিয়া তাহার কিছুই অনুমান করা যায় না। আজ যেমন পথে ঘাটে সংবাদপত্রের ছড়াছড়ি এবং তাহাদের মারফত দেশের সকল বিষয়ের আলোচনা ও সর্বসমক্ষে বিষয়াদির উপস্থাপন সম্ভব হইয়াছে, তখন তাহা অতি সামান্য মাত্রই ছিল। এমনই সময়ে সর্বসাধারণকে দেশাত্মবোধে উদবোধিত করা যে কত বড় কঠিন কাজ, তাহা একটু চিস্তা করিলেই বুঝিতে পারা যায়। মতিলাল ও তঁহার অগ্রজ শিশিরকুমার* অগ্রণী হইয়া এই দুরূহ কাৰ্য সাধন করিয়াছিলেন। তঁহাদের জীবনই এই কার্যের এক সংগ্ৰামময় ইতিহাস বা প্রকৃত পক্ষে এদেশের সংবাদপত্রেরই ইতিহাস বলা যাইতে পারে। শ্রদ্ধাবান হিন্দু পরিবারে মতিলাল জন্মগ্রহণ করেন। র্তাহার পিতামহ পদ্মলোচন ঘোষ তখনকার বিখ্যাত কুলীন ছিলেন। কিন্তু তাহার আর্থিক অবস্থা তাদৃশ সচ্ছল ছিল না। মতিলালের পিতা হরিনারায়ণ ঘোষ মহাশয় যশোহর জেলা আদালতে ওকালতি করিয়া যথেষ্ট অর্থ উপার্জন করেন। দোল, দুর্গোৎসব, বারো মাসে তেরো পার্বণ, ক্রিয়াকর্মাদি র্তাহার বাড়িতে বাধা ছিল। আরবি ও পারসি ভাষায় তিনি সুপণ্ডিত ছিলেন। আজিকার বিখ্যাত অমৃতবাজার পত্রিকার নামকরণ হইয়াছে, অমৃতবাজার গ্রামের নাম হইতে। এই অমৃতবাজার গ্রাম যশোহর জেলায়। পূর্বে ইহার নাম ছিল পলুয়া মাগুরা। মতিলালের মাতার নাম অমৃতময়ী। এই মাতৃনামানুসারে পরে ঐ গ্রামের নাম হয়। অমৃতবাজার, এবং সেই গ্রাম হইতে তঁহাদের পত্রিকার প্রথম প্রচার হেতু তাহার নাম হয় অমৃতবাজার পত্রিকা। মতিলালকে লইয়া তাহারা আট ভাই। তন্মধ্যে হেমন্তকুমার, শিশিরকুমার ও মতিলাল এই তিন জনে মিলিয়া অমৃতবাজার পত্রিকার প্রবর্তন করেন। তঁহাদের আট ভ্রাতার পরস্পরের প্রতি প্ৰগাঢ় অনুরক্তি ও সৌভ্রাত্রের এক অত্যুজ্জ্বল নিদর্শন ছিল। জনসমাজে ও জননায়কগণের মধ্যে শীঘ্রই সুপরিচিত হইয়া উঠেন। কালে তাহারা শীর্ষস্থানীয়গণের অন্যতম হন ও তাহাদের অভিমতাদি সমগ্র দেশের মতামত বলিয়া গ্রহণীয় হইতে থাকে। তঁহাদের কনিষ্ঠ ভ্রাতা গোপাললালও ক্রমে পত্রিকার কার্যে যোগদান করিয়া পরে সম্পাদকত্ব গ্রহণ করিয়াছিলেন।