পাতা:বঙ্গ গৌরভ - জলধর সেন.pdf/১৪৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ο Σ. Ν. বঙ্গ-গৌরব শাস্ত, শিষ্ট, সুবোধ, মতিলাল শৈশব হইতেই মিষ্টভাষী ছিলেন। জ্যেষ্ঠ ভ্রাতাদের আনুগত্য র্তাহার এমনি ছিল যে কখনই তাহদের ছাপাইয়া যাইবার কল্পনাও তাহার মনে আসিত না। চিরকাল অন্তরালে থাকিয়াই তিনি দেশের ও দশের সেবা করিয়া গিয়াছেন; যদিও প্রতিপত্তির সুযোগ তাহার বহু প্রকারে আসিয়াছিল, সে সুযোগ তিনি গ্ৰহণ করেন নাই। কৰ্মযোগী মতিলাল দুঃস্থ দেশবাসীর দুঃখ-নিবারণ-চেষ্টাই জীবনের ব্ৰত বলিয়া গ্ৰহণ করিয়াছিলেন। কৃষ্ণনগর কলেজিয়েট স্কুল হইতে মতিলাল প্ৰবেশিকা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। স্বাস্থ্য তাহার কোন দিনই ভাল ছিল না। কিন্তু পদব্ৰজে ভ্ৰমণও তাহার কম ছিল না। যানবাহনের সুবিধা তখন ছিল না ; তাই তিনি বাড়ি হইতে কৃষ্ণনগর পর্যন্ত ৫০ মাইল অনায়াসেই পদব্রজে অতিক্রম করিতেন। পাশ করার পর কিছুদিন জেনারেল অ্যাসেমব্লি ইনস্টিটিউশনে এবং কিয়ৎকাল কৃষ্ণনগর কলেজে ফাস্ট আর্টস পড়িয়ছিলেন, কিন্তু পরীক্ষা দেন নাই। অত্যধিক পরীক্ষার চাপ তাহার ভাল লাগিত না; কিন্তু তাই বলিয়া জ্ঞানানুশীলনে কোন দিনই তাহার বিরতি छिन मां। তিনি অতি সুকণ্ঠ ছিলেন। র্তাহার সঙ্গীত বহু স্থানের গ্ৰাম্য সমাজের অনেকের পক্ষে একটা আকর্ষণ ছিল। খুলনা জেলার পিলজং গ্রামের উচ্চ ইংরেজি বিদ্যালয়ের হেডমাস্টারি গ্রহণ র্তাহার প্রথম কার্য। বয়স তখন মাত্র ষোলো। শিক্ষাদান কার্যে র্তাহার সাফল্য অসাধারণ বলিয়া অনেকেই স্বীকার করিয়াছিলেন। কিন্তু এই কাৰ্য তিনি অধিক কাল করেন নাই। র্তাহার মতের দৃঢ়তা ছিল অসাধারণ ; আদেশ লঙ্ঘন করিবার সাহস কাহারও ছিল না বটে, কিন্তু তাহার ব্যক্তিত্বের সম্মুখে, তাহার আদেশের বিরুদ্ধে, বাদপ্রতিবাদ বড় বেশি উপস্থিত হইত না। র্তাহার জ্যেষ্ঠ ভ্রাতা বসন্তকুমার অনেকদিন হইতেই ‘অমৃত প্রবাহিণী” নামে একখানি পাক্ষিক পত্র প্রচার করিতেছিলেন। এই কাগজখানিই প্রকৃত পক্ষে অমৃতবাজার পত্রিকার পূর্ব সূচনা। হেমন্তকুমার ও শিশিরকুমার ইনকম ট্যাক্সে ডেপুটি কালেক্টরি ছাড়িয়া এবং মতিলাল র্তাহার হেডমাস্টারি ছাড়িয়া দিয়া ১৮৬৮ সালে গৃহে ফিরিয়া আসিয়া অমৃতবাজার পত্রিকা বাংলা সাপ্তাহিক রূপে বাহির করিতে আরম্ভ করেন। একটি ছোট কাঠের প্রেস, কিছু পুরাতন টাইপ ও র্তাহারা কয়েক ভাই-এই ছিল কাগজের সম্পত্তি। নিজেরাই কপি লিখিতেন, কালি প্ৰস্তুত করিতেন, কম্পোজ করিতেন, টাইপে কালি লাগাইতেন, ছাপিতেন এবং সেই ছাপা কাগজ নিজেরাই প্যাক করিয়া ডাকে দিতেন। গ্ৰাহকসংখ্যা তখন অনুমান পাঁচশত। এমন হইয়াছে, আইনের পীড়নে মুদ্রণকার্য সম্ভবপর হয় নাই-ছাপা কাগজের পরিবর্তে হস্তলিখিত লিথো কপি চারিদিকে প্রেরিত হইয়াছে, তবুও তাহারা কোনো দিনই দমেন নাই। রাজপুরুষগণের বিরুদ্ধে সমালোচনা করিয়া মানহানির দায়ে প্রায় সর্বস্বাস্ত হইয়াছেন। বিচারে মুক্তিলাভ করিলেও যখন বুঝিয়েছেন গ্রামে থাকিয়া পত্রিকা পরিচালন