পাতা:বঙ্গ গৌরভ - জলধর সেন.pdf/৩৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

কেশবচন্দ্ৰ সেন Sis এই বিদ্যালয়ে পাড়ার ছোট-বড়, ইতর-ভদ্র সকলকেই লেখাপড়া শিখানো হইত এবং তাহাদিগকে নীতি ও ধর্ম সম্বন্ধে উপদেশ দেওয়া হইত। কিন্তু কেশবচন্দ্রের মনে সত্য পথ সম্বন্ধে যে দ্বিধা জাগিয়াছিল তাহা সহজে দূরীভূত হইল না। পাদরি ব্যারন সাহেবের কাছে তিনি বাইবেল পড়া আরম্ভ করিয়া দিলেন। মাঝে মাঝে “ও লর্ড” বলিয়া তাহাকে ইংরেজিতে উপাসনা করিতেও শোনা যাইত । অনেকে মনে করিলেন এইবার কেশবচন্দ্ৰ বুঝি খ্রিস্টান হইয়া যান। কিন্তু বাইবেল প্রভৃতি পড়ার ফলে ঈশ্বর নিরাকার এ ধারণা তঁহার মনে বদ্ধমূল হইলেও তিনি খ্রিস্টান ধর্ম ত গ্রহণ করিলেনই না, বরং হিন্দু ধর্মের বাহিবের আড়ম্বরগুলি ছটিয়া ফেলিয়া হিন্দু ধর্মের গোড়াকার তথ্যটাকেই খুজিয়া বাহির করিতে চেষ্টা করিতে লাগিলেন। এই সময় কলুটােলার নিজ বাটীতে তিনি ‘গুডউইল ফ্রেটারনিটি’ নাম দিয়া ধর্মালোচনা করিবার জন্য একটি সভা স্থাপন করেন। এই সভায় এবং পরে যখন হিন্দু কলেজ থিয়েটার-গৃহে ব্রিটিশ ইণ্ডিয়া সোসাইটি” নামে একটি সাহিত্য ও বিজ্ঞানসভা স্থাপিত হইল, তখন তাহাতে বক্তৃতা করিয়াই তিনি তঁহার অতুলনীয় বাগিতার অদ্ভুত শক্তি অর্জন করেন। বক্তা হিসাবে তাঁহার মত খ্যাতিলাভ ভারতবর্যের অতি অল্প লোকের ভাগেই ঘটিয়াছে। স্বগীয় রাজনারায়ণ বসু মহাশয়ের বক্তৃতা পড়িয়াই কেশবচন্দ্ৰ ব্ৰাহ্মধর্মের প্রতি প্রথমে দেবেন্দ্রনাথের পরিচয় হয়। কেশবচন্দ্রের চরিত্র, জ্ঞান, ধর্মবুদ্ধি ও বক্তৃতা-শক্তি মহর্ষির মনে সহজেই রেখাপাত করিল। তিনি তঁহাকে সাদরে গ্রহণ করিলেন। এই সময় কেশবচন্দ্রের আত্মীয়-পরিজন ভীত হইয়া কুলগুরুর নিকট হইতে র্তাহাকে মন্ত্র গ্ৰহণ করাইবার জন্য একবার চেষ্টা করেন। কেশবচন্দ্ৰ পীড়নের আশঙ্কা করিয়া সমস্ত দিন দেবেন্দ্রনাথের বাড়িতে পলাইয়া থাকিলেন এবং রাত্ৰিতে বাড়ি ফিরিয়া মাতার দ্বারা গুরুর নিকট কয়েকখানি গ্ৰন্থ পাঠাইয়া তাহাকে জানাইলেন--তিনি এই গ্রস্থ্যেক্ত ধর্মেই দীক্ষা গ্ৰহণ করিয়াছেন সুতরাং অন্য মন্ত্র লাইতে পরিবেন না। গুরু গ্রন্থগুলি পড়িয়া কহিলেন, “এ ধর্ম ত উৎকৃষ্ট ধর্ম। হিন্দুধর্মের সার-সংগ্ৰহ। কিন্তু পালন করা ভারী কঠিন।” ইহার পর ইং ১৮৫৭ অব্দের শেষভাগে তিনি প্রকাশ্যভাবে ব্ৰাহ্মধর্মে যথারীতি দীক্ষিত হন । ব্রাহ্মধর্মে দীক্ষা গ্রহণের পর তঁহার প্রতি লাঞ্ছনা ও উৎপীড়ন বড় অল্প হয় নাই। নিকট আত্মীয়েরাও তঁহাকে অস্পৃশ্য করিয়া রাখিয়াছিলেন। তথাপি তঁহার সংকল্প 'টলে নাই। পীড়ন ও লাঞ্ছনা। তিনি হাসি মুখে সহ্য করিয়াছেন। এই লাঞ্ছনার ভিতর দিয়াই কেশবচন্দ্রের সঙ্গে দেবেন্দ্রনাথের ঘনিষ্ঠতা নিবিড় হইয়া উঠে। ১৮৫৯ খ্রিস্টাব্দে ২৪ এপ্রিল যুবকদিগকে ধর্মশিক্ষা দানের জন্য সর্বপ্রথম ব্রাহ্ম বিদ্যালয় স্থাপিত হয়। এই বিদ্যালয়ে মহর্ষি বাংলাতে এবং কেশবচন্দ্র ইংরেজিতে ধর্মবিজ্ঞান শিক্ষা দেওয়ার ভার গ্রহণ করেন। হিন্দু যুবকদের ভিতরে খ্রিস্টান হইবার