পাতা:বনে পাহাড়ে - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৩৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

○盤 বনে-পাহাড়ে উড়িষ্যার জঙ্গলে একবার একজন কাঠুরে একটা শুকনো কাঠের গুড়ি কাটতে গিয়েছিল, গুড়িটার চারপাশে বড় বড় বন ছিল, বাইরের থেকে কিছু দেখা যায় না। কাঠুরোটা যেমন সেখানে গিয়েছে অমনি একটা প্ৰকাণ্ড পাইথন ওর একখানা পা জড়িয়ে ধরে ওকে ফেলে দিলে, তারপর লেজের প্রান্ত দিয়ে গুড়িটা জড়িয়ে ধরে আস্তে আস্তে ওর সর্বদেহে কুণ্ডলীর আকারে জড়াতে লাগল। ভাগ্যে। ওর সঙ্গে আরও লোক ছিল কিছুদূরে । ওর চীৎকারে তারা এসে পড়ে সাপটিাকে মেরে ফেলে। দু’তিন মাস ভোগবার পরে লোকটা বেঁচে যায়। আমি শুনেছি চল্লিশ ফুট পৰ্য্যন্ত সাপ এ জঙ্গলে দেখা গিয়েছে। ঝরণার ধারে গাছের উপরেই এ জাতীয় সাপ সাধারণতঃ বাস করে, কারণ ওখানেই ওদের শিকারের সুবিধা। ক্রমে রাত্ৰি গভীর হলো, নানা প্ৰকার সাপ ও বাঘের গল্প শুনে আমাদের মনে একপ্রকার অস্পষ্ট রহস্যময় ভীতির সঞ্চার হয়েছিল। আমরা সভ্য জগতের অধিবাসী, অন্ধকারময় বনানীর দৃশ্যও আমাদের নিকট গম্ভীর ও সুন্দর বটে, কিন্তু এ অনুভূতিও জাগিয়ে দেয় যে এ আমাদের পক্ষে বিদেশ। এখানে বুধনি কুইএর মত হো-মেয়েরা সচ্ছন্দে ও সানন্দে বিচরণ করতে পারে, বন্য কার্পাস থেকে মোটা কাপড় বুনতে পারে, এরা কন্দমূল ফল আহরণ করে ক্ষুন্নিবৃত্তি করতে পারে, এরা কর জন্ত মহুয়া প্ৰভৃতি বুক্ষের বীজ সংগ্ৰহ করে তেল তৈরী করতে পারে, কিন্তু আমরা সঙ্গে করে সভ্য খাদ্য না আনলে এখানে তিন দিনও বাঁচবো না । তাছাড়া এসব বনে পাহাড়ী ঝরণার জলে সুদান করা বা ঝরণার জল পান করা আদৌ নিরাপদ নয় । ম্যালেরিয়ার ভয় যথেষ্টই আছে। বন-বিভাগের কৰ্ম্মচারীরা বাধা নিয়মে পাচ গ্ৰেণ করে কুইনাইন প্ৰত্যহ খান, তবুও ম্যালেরিয়ায় ভোগার কথা। ওঁদের কাছেই শুনেছি। অথচ ঐ সবের জন্য নরনারীর সুন্দর স্বাস্থ্য, উচ্ছল জীবনানন্দ দেখে হিংসা হয় । জ্বর-জারির নামও ওরা শোনেনি। কুইনাইন চক্ষেও দেখেনি। বিনা মুণে ও বিনা তরকারীতে মোট চালের ভাত ও জঙ্গলের কন্দমূল খেয়ে অমন স্বাস্থ্য কি করে হয় তা আমাদের