পাতা:বিবিধ কথা.djvu/১৪৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৩২
বিবিধ কথা

‘মন্দির’ নামে যে গল্পটি প্রথম পুরস্কার পাইয়াছিল, তাহার লেখক এই শরৎচন্দ্রই, তখন আর উপায় রহিল না। ঐ গল্পটি আমি ভুলি নাই; যাঁহার নামে উহা প্রকাশিত হইয়াছিল, এত দিনে তাঁহার প্রতিভার আর কোন প্রমাণ না পাইয়া একটু আশ্চর্য্যই হইয়াছিলাম। ফণীবাবুর এই একটি কথায় তদ্দণ্ডেই আমার মনোভাব বদলাইয়া গেল—‘যমুনা’র গল্পগুলি সম্বন্ধে কৌতূহল দুর্দ্দমনীয় হইয়া উঠিল। ঘরে আসিয়া প্রথমেই হাতে পড়িল—‘যমুনা’ নয়, একখণ্ড ‘ভারতবর্ষ’; বেশ মনে আছে, সেখানি সেই বৎসরের মাঘ সংখ্যা, তাহাতে সেই শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় নামধারী অখ্যাতনামা লেখকেরই ‘বিরাজ বৌ’ নামে একটি গল্প শেষ হইয়াছে— পৌষ-সংখ্যায় তাহার পূর্ব্বার্দ্ধ প্রকাশিত হইয়াছিল, তথাপি এ পর্য্যন্ত তাহা পড়ি নাই; বাজে গল্প তো কতই বাহির হয়, বাংলা মাসিকের তাহাই প্রধান উপজীব্য। ভাগ্যে গল্পটি সমাপ্ত হইয়াছিল, তাই ‘ভারতবর্ষে’র সেই গল্পটিই পড়িতে বসিলাম। পড়িবার কালে ও পড়া শেষ হইলে, আমার মনের অবস্থা যাহা হইয়াছিল, তাহা আপনারা কোনমতেই কল্পনা করিতে পারিবেন না; কারণ আপনাদের সহিত শরৎচন্দ্রের পরিচয় এমন অবস্থায় এভাবে হয় নাই। তথাপি আপনারা ভাবিয়া দেখুন, এত বড় সুগভীর অনুভূতিসম্পন্ন একজন লেখক—তাঁহার সেই অনবদ্য লিপিকৌশল লইয়া অকস্মাৎ বাংলা সাহিত্যের সেই প্রায় গতানুগতিকতা-ক্লিষ্ট সমতল পথে সহসা আবির্ভূত হইলেন!—ইহার পূর্ব্বে সেই আবির্ভাবের কিছুমাত্র সূচনা বা প্রত্যাশা ছিল না; এমন ঘটনা আর কখনও ঘটে নাই। এই কারণ ছাড়া বিস্ময়ের অন্য কারণও ছিল। ‘বিরাজ বৌ’ পড়িয়া সেই প্রথম উপলব্ধি করিলাম যে, কাব্যের উৎকর্ষের জন্য বাস্তবকে কিছুমাত্র ক্ষুণ্ণ করিতে