পাতা:বিবিধ কথা.djvu/১৪৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
শরৎ-পরিচয়
১৩৩

হয় না—বুঝিলাম যে, হৃদয়বৃত্তির সহিত যদি কবি-শক্তির মিলন হয়, তবে উৎকৃষ্ট কাব্যরস আস্বাদনের জন্য এই মানব-মানবীর সংসার হইতে দূরে কোনও ভাব-বৃন্দাবন গড়িয়া লইতে হয় না। কিন্তু কেবল সাহিত্যিক তত্ত্বই নয়, আরও একটা সত্য তখন আমি উপলব্ধি করিয়াছিলাম; আমাদের সংসারে, বাঙালীর ঘরে, নারীর যে মূর্ত্তি দেখিলাম, তাহা একই কালে অপূর্ব্ব ও অতি পরিচিত বলিয়া মনে হইল। আজন্ম যাহাদিগের সহিত নানা সম্পর্কে, নানা ব্যবহারে নিত্য-পরিচয়ের একটা অভ্যস্ত সংস্কারমাত্র গড়িয়া উঠিয়াছে; নারীর যে প্রকৃতি সম্বন্ধে কাব্যে উপন্যাসে ছাড়া আর কোথাও চিত্তচমৎকারের প্রশ্রয় দিই নাই, আজ তাহার সম্বন্ধে অতিশয় সচেতন হইয়া উঠিলাম। রামায়ণ-মহাভারতের মত কাব্যে কতকটা অলৌকিক ও অতিমানুষ পরিবেশের মধ্যে, যে দুই চারিটি নারী-চরিত্রের বিস্ময়জনক চিত্র, অথবা অপেক্ষাকৃত আধুনিক ইতিহাসে ভারতীয় নারী-প্রকৃতির ক্ষণস্ফুর্ত্ত মহিমার যে প্রকাশ ক্বচিৎ চিত্তগোচর হইয়াছে, তাহাই বাংলার পল্লীগৃহে, সমাজে ও পরিবারের সঙ্কীর্ণ গণ্ডির মধ্যে যে এমন শক্তির আধার হইয়া বিরাজ করিতেছে, তাহা এমন করিয়া দেখানো এবং বিশ্বাস করানো ইতিপূর্ব্বে বাংলা সাহিত্যে ঘটে নাই। শরৎচন্দ্রের ‘বিরাজ বৌ’ পড়িয়াই শরৎপ্রতিভার সহিত আমার পরিচয়ের সূত্রপাত হইয়াছিল, তাই শরৎচন্দ্রের রচনাবলীর মধ্যে ‘বিরাজ বৌ’ আমার মনে একটু বিশিষ্ট স্থান অধিকার করিয়া আছে। বাঙালীর দাম্পত্য-প্রেমকে,—আমাদের সেই হিন্দু আচার ও সংস্কার-বন্ধনের মধ্যেই ব্যক্তি-চেতনার এক অতি প্রবল গভীর উন্মেষকে, মানব-ভাগ্যের এমন মহনীয় ট্র্যাজেডির দ্বারা মণ্ডিত করা—বাঙালী-প্রাণের বৃন্দাবনী গাথায় এমন আকাশভাঙা