পাতা:বিবিধ কথা.djvu/১৪৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৩৪
বিবিধ কথা

বজ্রঝঞ্ঝাধ্বনি মিলাইয়া দেওয়া, আমার নিজস্ব রসবোধ ও কার্য্যসংস্কারকে চরিতার্থ করিয়াছিল।

 ইহার পর ‘যমুনা’য় প্রকাশিত গল্পগুলি পড়িলাম—পরিচয় আরও নিঃসংশয় হইয়া উঠিল; এবং লেখার মধ্যে লেখকের যে আন্তরিকতা সংক্রামক হইয়া পাঠককে আচ্ছন্ন করে, শরৎচন্দ্রের গল্পগুলির সেই ব্যক্তিগত আকর্ষণ আমাকে লেখকের ব্যক্তি-পরিচয় পাইবার জন্য অধীর করিয়া তুলিল। আমি শরৎচন্দ্রের জীবনেতিহাস জানিবার জন্য উন্মুখ হইয়া রহিলাম।

 এই সময়ে সেকালের একজন পুণ্যচরিত সাধক প্রকৃতি সাহিত্যিকের সঙ্গে আমার আলাপ হয়—তাঁহার নাম কুমুদনাথ লাহিড়ী। তিনি বলিলেন, রেঙ্গুনে অবস্থানকালে তিনি শরৎচন্দ্রকে দেখিয়াছিলেন; কিন্তু শরৎচন্দ্রের সে পরিচয় আমার স্বপ্ন সফল করিবে না, হয়তো আমাকে আঘাত করিবে, আমার সাহিত্যিক আবেগ ও উৎসাহ তাহাতে বাধা পাইতে পারে; কারণ, আমার বয়স ও অভিজ্ঞতা অল্প—মানুষকে ঠিকমত বিচার করিবার বুদ্ধি তখনও আমার না হইবারই কথা। তথাপি নির্ব্বন্ধাতিশয্য দেখিয়া তিনি যেটুকু সংবাদ দিলেন, তাহাতে ইহাই বুঝিলাম যে, এ মানুষ যদি শক্তিমান হয়, তবে সাধারণ চরিত্র-নীতি বা সমাজ-নীতির মানদণ্ডে ইহাকে মাপিয়া লওয়া যাইবে না। সংস্কারে আঘাত লাগিল বটে, কিন্তু বিশ্বাস হারাইলাম না, মনে একটা বিস্ময়বোধ রহিয়া গেল।

 ইহার পর সরকারী চাকুরি উপলক্ষ্যে আমি কিছুকাল কলিকাতা ত্যাগ করিতে বাধ্য হইলাম—সাহিত্যিক-সমাজ ও তাহার নিত্যকার সম্পর্ক হইতে বিচ্ছিন্ন হইয়া পড়িলাম। তথাপি শরৎচন্দ্রই সে সময়ে