পাতা:বিবিধ কথা.djvu/১৪৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৩৬
বিবিধ কথা

গল্প-উপন্যাসের রসবোধও তাঁহার অভ্রান্ত ছিল। তিনিও শরৎচন্দ্রের নাম শুনেন নাই, আমার প্রশংসা অতিরিক্ত মনে করিয়া তাহা মিথ্যা প্রমাণ করিবার জন্য ‘পল্লীসমাজ’ পড়িতে বসিলেন। রাত্রে দুইজনে এক ঘরে শুইয়াছি—বাহিরে অনতিদূরে বাতাসে পদ্মার জলোচ্ছ্বাস শোনা যাইতেছে। আমি বইখানি আগেই পড়িয়াছিলাম। পাশের খাটে শিয়রে বাতি জ্বালাইয়া তিনি নীরবে পাতা উল্টাইতেছেন, আমি তাঁহার ভাবখানা লক্ষ্য করিতেছি—যেন জেদ করিয়া একটা অবজ্ঞার ভাব রক্ষা করিতে হইবে, দুই একটা মন্তব্যও হইতেছে, কিন্তু শেষে একেবারে মগ্নভাব—বাক্যস্ফূর্ত্তির আর অবকাশ নাই। আমিও ঘুমাইয়া পড়িলাম। এক সময় গভীর রাত্রে তিনি আমার শয্যাপার্শ্বে কি একটা খুঁজিবার অছিলায় আমার ঘুম ভাঙাইয়া দিলেন। দেখিলাম, বই বন্ধ করিয়াছেন—অন্তরের ভাবাবেগ একটু প্রকাশ না করিয়া আর যেন অগ্রসর হইতে পারিতেছেন না। কিন্তু লজ্জায় তাহা পারিলেন না, কিছুক্ষণ পরে আবার পড়িতে লাগিলেন। সকালে উঠিয়া শুনিলাম, প্রায় সমস্ত রাত্রি জাগিয়া বইখানি শেষ করিয়াছেন; তারপর আমার সঙ্গে সে কি আলোচনা! এমন করিয়া সাহিত্যরস ভাগ করিয়া ভোগ, আমি জীবনে আর কখনও করি নাই। শরৎচন্দ্রের উপন্যাসে যে বিশেষ রস আছে, তাহা কত অরসিককেও রসিক করিয়া তুলিয়াছে— রসিকের তো কথাই নাই। সাহিত্যরসের আস্বাদনে সেই যে সমপ্রাণতার আনন্দ পাইয়াছিলাম, এবং সাহিত্যিক অভিমানবর্জ্জিত একজন সহজরসিকের নিকটে সেদিন মনে মনে যে পরাজয় স্বীকার করিয়াছিলাম, তাহাতে ইহাই বুঝিয়াছি যে, সর্ব্বজন হৃদয়গ্রাহী যে সাহিত্য তাহার বিচারে কেবল মার্জ্জিত মনোবৃত্তি বা আর্টের জ্ঞানই যথেষ্ট