নয়—সহজ ও স্বাভাবিক রস-সংস্কারেরও প্রয়োজন আছে। ইহাকেই আমাদের অলঙ্কারশাস্ত্রে ‘প্রাক্তন সংস্কার’ বা ‘বাসনা’ নাম দেওয়া হইয়াছে।
২
ইহার কিছুদিন পরে একবার ছুটিতে কলিকাতায় অবস্থানকালে হঠাৎ শরৎচন্দ্রকে দেখিলাম। সেই প্রথম সাক্ষাতের সব কথাই মনে আছে। কর্নওয়ালিস স্ট্রীটের একটা দোকানঘরের উপরে তখন ‘যমুনা’-আফিস, একখানি ঘর ও তাহার কোলেই একটু ছাদ—উপরতলার এই ক্ষুদ্র অংশমাত্র ‘যমুনা’র অধিকারে ছিল; ঘরে আফিস, ও বাহিরে ছাদে ফরাশ পাতিয়া বৈঠক বসিত। সেদিন বেলা দুই-তিনটার সময়েই শরৎচন্দ্র আসিয়াছিলেন, আমিও সংবাদ পাইয়া উপস্থিত হইয়াছিলাম। শরৎচন্দ্র একখানি চেয়ারে বসিয়া গল্প করিতেছেন, একটু রুক্ষ শুষ্ক মূর্ত্তি—খাঁটি দেশী চেহারা। কিছু পরে রাস্তার ওপারের দোকান হইতে চা ও চপ আসিল। দেখিলাম, একটি কুকুর শরৎচন্দ্রের হাঁটুর উপরে দুই পা রাখিয়া তাঁহার হাতের ডিশ হইতে চা খাইতে লাগিল, মধ্যে মধ্যে চপের টুকরাও সাগ্রহে ভোজন করিতে লাগিল। ইতিমধ্যে ‘ভারতী’-সম্পাদক মণিলাল গঙ্গোপাধ্যায় আসিয়াছেন—তিনি কুকুরকে এরূপ ঘৃতপক্ব আহার্য্য দেওয়ার সম্বন্ধে শরৎচন্দ্রকে সাবধান করিয়া দিলেন। শরৎচন্দ্র তাঁহার কুকুরের এই কুপথ্য-প্রীতির অপরাধ গুরুতর বলিয়া মনে করিলেন না। সস্নেহে তাহার দিকে চাহিয়া বলিলেন, “ও বড় একা বোধ করে, ওর জন্যে একটি ভাল সঙ্গিনী