বিষয়বস্তুতে চলুন

পাতা:রমেশ রচনাবলী (উপন্যাস).djvu/১৪৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

बाथबौकथ्कन নিম্মাণ করিয়া নগর পরিপণ ও সশোভিত করিয়াছে, দুই শত বৎসর প্বে তাহা ছিল না। তখন কেবল মহল্লোক বা ইতর লোক ছিল, প্রাসাদ বা পর্ণকুটীর! যাইতে যাইতে নরেন্দ্র একটী বড় রাজপথে গিয়া পড়িলেন। সে পথে অনেকগুলি প্রশস্ত ও বড় বড় অট্টালিকা দেখিতে পাইলেন। মনসবদার, কাজী, বণিক, ওমরাহ, রাজা প্রভৃতি মহল্লোকের হল্ম্যশ্রেণীতে পথ সন্দর দেখাইতেছে। নরেন্দ্র এরপে সন্দের অট্টালিকাশ্রেণী কোথাও দেখেন নাই, প্রাসাদ সমুহের পাশ্ব দিয়া যাইতে যাইতে গজপতির সহিত কথোপকথন করিতে লাগিলেন । ক্ষণেক যাইতে যাইতে উভয়ে প্রসিদ্ধ জমা মসজীদ দেখিতে পাইলেন, ভারতবষে সেরাপ মসজীদ আর একটীও ছিল না, বোধ হয় জগতে সেরাপ নাই। নরেন্দ্রনাথ বিস্মিত হইয়া জিজ্ঞাসা করিলেন,—সমখে এই বৃহৎ মসজীদ কি ? গজপতি। ওটী জমা মসজীদ। শুনিয়াছি একটী পৰ্বতের উপরিভাগ সমতল করিয়া তাহার উপর ঐ মসজীদ নিমিত হইয়াছে। উহার আরক্ত বণে নয়ন ঝলসাইয়া যাইতেছে, তাহার উপর শ্বেতপ্রস্তরের তিনটী গম্বুজ উঠিয়াছে। বাদশাহ যখন দিল্লীতে থাকেন স্বয়ং ঐ মসজীদে প্রতি শুক্রবার যান, সে সমারোহ তুমি একদিন দেখিলে কখনও ভুলিতে পারবে না। দাগ হইতে মসজীদ পয্যন্ত চারি পাঁচ শত সিপাহী সার দিয়া দাঁড়ায়, তাহাদের বন্দকের উপর হইতে সন্দের রক্তবর্ণ পতাকা উড়িতে থাকে। পাঁচ ছয় জন অশ্বারোহী পথ পরিকার করিতে করিতে আগে যায়, পরে বাদশাহ হস্তীর উপর জাজস্বল্যমান সিংহাসনে আরোহণ করিয়া যান, তাহার পর ওমরাহ ও মনসবদারগণ অপরুপ সজা করিয়া মসজীদে গমন করে। কিন্তু আর এ স্থানে দাঁড়াইয়া কি হইবে, চল আমরা দুগের ভিতর যাইয়া রাজবাটী দেখি। দর হইতেই রক্তবণ উন্নত দাগ-প্রাচীরের অপরাপ সৌন্দৰ্য্য দেখিয়া নরেন্দ্রনাথ চমৎকৃত হইলেন। সেই সময়ে ভারতবষে যে দেশের যে লোক আসিয়াছেন, তিনি দিল্লীর দাগ ও রাজবাটীর শ্বেতপ্রস্তর-নিমিত মসজীদ, প্রাসাদ ও হল্ম্যাবলীকে জগতের মধ্যে অতুল্য বলিয়া বর্ণনা করিয়া গিয়াছেন। দগে প্রবেশের স্থানে একটী বিস্তীণ প্রাঙ্গণ, তাহার মধ্যে একজন হিন্দুরাজার শিবিরশ্রেণী রহিয়াছে, রাজা দগের দ্বার রক্ষা করিতেছেন। অশ্বারোহী ও ওমরাহগণ সব্বদাই এদিক ওদিক যাতায়াত করিতেছেন, এবং দনগেরি ভিতর হইতে সিপাহিগণ বাহিরে আসিতেছে আবার ভিতরে যাইতেছে। বিদেশীয় বণিকগণ দগে"দ্বারে সমবেত হইতেছে, এবং সহস্ৰ সহস্র ইতর লোকও নদীর স্রোতের ন্যায় এদিক ওদিক ধাবিত হইতেছে। দ্বারদেশে দুইটী প্রস্তর-নিশ্চিমত হস্তীর আকৃতি, তাহার উপর দুইটী মনষ্যের প্রতিমৃত্তি । নরেন্দ্র উৎসকে হইয়া এ কাহার প্রতিমাত্তি জিজ্ঞাসা করিলেন। গজপতি বলিলেন—আপনি হিন্দ, আপনি জানেন না ? ইহারা দুইজন রাজপতে বীরপরেষে। চিতোরের জয়মল্ল ও পত্ত সম্রাট আকবরের সহিত ভীষণ যুদ্ধ করিয়া সেই দাগ রক্ষা করিয়াছিলেন; পরে যখন আর পারিলেন না, অধীনতা স্বীকার করিতে অস্বীকৃত হইয়া যুদ্ধে হত হয়েন। আমার পিতামহ তিলকসিংহ সেই যুদ্ধে জীবন দান করিয়াছিলেন, পিতা তেজসিংহের নিকট বাল্যকালে সে অপব্ব কাহিনী শুনিতাম। পত্তের মাতা ও বনিতা বীররমণী ছিলেন, তাঁহারাও বীরত্ব প্রকাশ করিয়া হত হয়েন। তাঁহাদিগের কীৰ্ত্তি চিরসমরণীয় করিবার জন্য সম্রাট আকবর এই প্রতিমাত্তি এই স্থানে স্থাপন করিয়াছেন। পরে সগবে গজপতি বলিলেন,—কিন্তু রাজপতেরাজদিগের কীত্তি চিরস্মরণীয় করিবার জন্য প্রতিমাত্তির আবশ্যক নাই, যত দিন বীরত্বের গৌরব থাকিবে, রাজপতে নাম কেহ বিস্মত হইবে না। রাজপতোনার প্রত্যেক পৰ্বতশেখরে রাজপতের বীরনাম খোদিত আছে, ভারতবষের প্রত্যেক বেগবতী নদীতরঙ্গে রাজপতের বীরনাম শদিত হইতেছে। প্রশস্ত পথ অতিবাহন করিয়া দুইজনে দাগের ভিতর প্রবেশ করিলেন। পথের দুই ধারে অট্টালিকা, তাহার উপর রাজকর্মচারিগণ রাজকাৰ্য্য করিতেছেন। দাগের দ্বারের বাহিরে যেরাপ হিন্দরোজগণ দ্বার রক্ষা করিতেন, ভিতরে এই পথের উপর মনসবদার ও ওমরাহগণ সেইরাপ দার রক্ষা করিতেন। দাগের ভিতর উভয়ে বড় বড় কারখানা দেখিতে পাইলেন। রাজপরিবারের যে সমদায় বিচিত্র দ্রব্য আবশ্যক হইত, ঐ স্থানে তাহা প্রস্তুত হইত। এক স্থানে রেশমকায্যের কারখানা, ১০৫