বিষয়বস্তুতে চলুন

পাতা:রমেশ রচনাবলী (উপন্যাস).djvu/১৪৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

রমেশ রচনাবলী অন্য স্থানে প্ৰণকারদিগের, অপর স্থানে চিত্রকরদিগের। ছাতার, দরজী, চাম ব্যবসায়ী, বস্ত্রব্যবসায়ী প্রভৃতি সকল প্রকার লোকের কারখানা ছিল। দেশে যত উৎকৃষ্ট কারিকর ছিল তাহারা প্রত্যহ প্রাতঃকাল হইতে সন্ধ্যা পয্যন্ত কাষ্য করিত ও মাসিক বেতন পাইত। সে সমস্ত কারখানা পশ্চাতে রাখিয়া উভয়ে ভিতরে যাইতে লাগিলেন। অনেক সমারোহের মধ্য দিয়া অনেক বিসময়কর হস্তম্য ও প্রাসাদের পাশ্ব দিয়া যাইয়া অবশেষে জগদ্বিখ্যাত মৰ্ম্মমরপ্রাসাদ “দেওয়ান খাস” দেখিতে পাইলেন। প্রাসাদের ছাদ সবেণ দ্বারা মন্ডিত ও রৌদ্রতাপে ঝলমল করিতেছে। প্রাসাদের ভিতরে সবণ ও হীরকখচিত দিবালোক প্রতিঘাতী রত্নবিনিমিত রাজসিংহাসনের উপর সম্রাট শাজিহান উপবেশন করিয়া রহিয়াছেন। তাঁহার গম্ভীর ও প্রশান্ত মুখমন্ডলে এখনও পীড়ার চিহ্ন অঙ্কিত রহিয়াছে; তিনি এখনও সম্পর্ণে আরোগ্যলাভ করেন নাই। দক্ষিণপাশ্বে জ্যেষ্ঠ পত্র দারা বসিয়া রহিয়াছেন; তাঁহার ললাট ও বদনমণ্ডল সন্দের ও প্রশস্ত, কিন্তু মুখে দমদমনীয় দপ ও অভিমান বিরাজ করিতেছে। বামদিকে পৌত্র সুলতান সলাইমান দন্ডায়মান রহিয়াছেন; বয়স পঞ্চবিংশতি বর্ষ হইবে, অবয়ব ও আকৃতি সন্দের ও উন্নত। পশ্চাতে খোজাগণ ময়র-পচ্ছে-বিনিমিত চামর হেলাইতেছে। তাহার চারিদিকে রৌপ্যনিশ্চিমত রেল আছে, রেলের বাহিরে রাজা, ওমরাহ, মনসবদার, দতে, সেনাপতি ও ভারতবষের প্রধান প্রধান লোক উচিত বেশভূষায় ভূষিত হইয়া কৃতাঞ্জলিপটে ভূমির দিকে চাহিয়া দণ্ডায়মান হইয়া রহিয়াছে! সম্মুখস্থ সমভূমি লোকে পরিপর্ণ। কি ধনী কি নিধান, কি উচ্চ কি নীচ, সে স্থানে যাইয়া রাজাকে দশন করিবার সকলেরই অধিকার আছে। সেই অপব্ব প্রাসাদে যথার্থই লিখিত রহিয়াছে,—“যদি পৃথিবীতে সবগ থাকে, তবে এই সবগ, এই সবগ, এই সবগ ।” : সম্রাটের সম্মুখে প্রথমে সন্দের সন্দের আরবদেশীয় অশ্ব প্রদশিত হইল। পরে বৃহৎকায় হস্তিশ্রেণী পরিদশিত হইল, হস্তিগণ কর উত্তোলন করিয়া বাদশাহকে "তসলীম” করিয়া চলিয়া গেল। পরে হরিণ, বাষ, মহিষ, গন্ডার, ব্যাঘ্র প্রভৃতি সকল জন্তু ও তৎপরে নানারপে পক্ষী একে একে প্রদশিত হইল। সম্রাটের বামধারী অশ্বারোহিগণ, তৎপরে বহুদশী কয়েক শত পদাতিক, তৎপরে অন্যান্য সেনাগণ একে একে সম্রাটের সম্মখে দিয়া চলিয়া গেল; তাহাদিগের পদভরে মেদিনী কম্পিত হইল । প্রদর্শন সমাপ্ত হইলে পর বাদশাহ দরখাস্ত গ্রহণ করিতে লাগিলেন । কি নীচ কি উচ্চ সকলেই আসিয়া রাজাধিরাজ ভারতবষের সম্রাটের নিকট আপন আপন দুঃখ জানাইতে লাগিল, সম্রাট দই একটী আদেশ দিয়া সকলের দুঃখ মোচন করিতে লাগিলেন। সম্রাট যে বিষয়ে যে কথা বলিলেন, তৎক্ষণাৎ সকল প্রধান প্রধান ওমরাহগণ “কেরামৎ কেরামৎ” বলিয়া ধন্যবাদ দিতে লাগিলেন। দুই ঘণ্টার মধ্যে রাজকায্য সমাধা হইয়া গেল, সম্রাট পত্র ও কয়েকজন প্রধান প্রধান ওমরাহের সহিত “গোসলখানায়” গেলেন। গোসলখানা কেবল হস্তমুখ প্রক্ষালনের জন্য নিশ্চিমত হয় নাই, তথায় প্রধান প্রধান অমাত্যদিগের সহিত রাজকায্যের গঢ় মন্ত্রণাদি হইত। নরেন্দ্র গোসলখানার পশ্চাতে উচ্চ প্রাচীর দেখিতে পাইলেন, তাহার ভিতরে অনেক হল্ম ও প্রাসাদ আছে। গজপতি কহিলেন,—ঐ প্রাচীরের পশ্চাতে রাজবাটীর বেগমদিগের ভিন্ন ভিন্ন মহল আছে, শুনিয়াছি সে মহল অতিশয় চমৎকার। প্রত্যেক বেগমের মক্ষমর-প্রাসাদের চারিদিকে উদ্যান ও কুঞ্জবন, গ্রীষ্মকালে দিবায় থাকিবার জন্য মাত্তিকার অভ্যন্তরে ঘর এবং নিশায় শয়নের জন্য প্রস্তরনিমিত উচ্চ উচ্চ ছাদ আছে। কিন্তু সম্রাট ভিন্ন অন্য পরেষের নয়ন সে সৌন্দয্য কখনও দেখে নাই, পরষের পদচিহ্নে সে রম্যস্থান অঙ্কিত হয় নাই। নরেন্দ্রনাথের পর্বে রাত্রির কথা সহসা সমরণ হইল। তাঁহার বোধ হইল ঐ প্রাচীরের সে রম্যস্থান অঙ্কিত হইয়াছে। কিন্তু সে পাব রাত্রির বিস্ময়কর কথা তিনি গজপতির নিকট প্রকাশ করিলেন না, আপনিও ঠিক বুঝিতে পারিলেন না। Σ) Ού