পাতা:রমেশ রচনাবলী (উপন্যাস).djvu/৪৩২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

সংগার তাহার পর ভ্রাতা ভ্রাতার সহিত, বন্ধ বন্ধর সহিত, পত্র মাতার নিকট, সকলে প্রণাম বা নমস্কার, আশীব্বাদ বা আলিঙ্গন দ্বারা সকলকে তৃপ্ত করিল। বোধ হইল যেন, জগতে আজি বৈরভাব তিরোহিত হইয়াছে, যেন শত্র শত্রকে ক্ষমা করিল, অপরাধগ্রস্ত অপরাধীকে ক্ষমা করিল। মনুষ্য-হৃদয়ের স্কুমার মনোবৃত্তিগুলি সফত্তি পাইল, দয়া, দক্ষিণ্য, ক্ষমা ও বাৎসল্য অদ্য বাঙ্গালীর হৃদয়ে উথলিতে লাগিল। শরতের সন্দের জ্যোৎস্নাতে রাজপথে আনন্দের লহরী, সৌজন্যের লহরী, ভালবাসার লহরী বাঁহতে লাগিল। সংসারের লীলাখেলা দেখিতে দেখিতে আমরা অনেক শোকের বিষয়, অনেক দুঃখের বিষয়, অনেক পাপ ও প্রবঞ্চনার বিষয় দেখিয়াছি— নিষ্ঠর লেখনীতে সেগুলি লিপিবদ্ধ করিয়াছি। অদ্য এই পণ্য রজনীতে ক্ষণেক দাঁড়াইয়া এই ಶ್ಗ ুন পল নুষ্ঠিত হয়, তাহার উপর যবনিকা পাতিত কর, সেগুলি আজ দেখিতে मा ! রাত্রি দেড় প্রহরের সময় বিন্দ রান্নাঘরে ভাত খাইয়া উঠিলেন। ছেলে দুইটী ঘামাইয়াছে, সন্ধা ঘনমাইয়াছে, হেমবাবাও শইয়াছেন, ঝিও বাড়ী গিয়াছে, বিন্দর সদর দরজায় খিল দিয়া নীচে একাকী ভাত খাইলেন ও উঠিয়া আচমন করিলেন। এমন সময়ে কপাটে একটা শব্দ শুনিলেন, কে যেন আস্তে আস্তে ঘা মারিল। .. তে কে আদি দি এক অজ্ঞ হিত আলি আবার শ l কে গা ? দরজায় কে দাঁড়িয়ে গা ? কোনও উত্তর আসিল না, আবার শব্দ হইল। বিন্দ কি উপরে গিয়া হেমকে উঠাইবেন ? হেম আজ অনেক হাঁটিয়াছেন, অতিশয় শ্রান্ত হইয়া নিদ্রিত হইয়াছেন। বিন্দ সাহসে ভর করিয়া আপনি গিয়া দরজা খালিয়া দিলেন। লোকটীকে দেখিয়া প্রথমে চিনিতে পারিলেন না, পরমহত্তেই চিনিলেন, শরচ্চন্দ্ৰ ! কিন্তু এই কি শরচ্চন্দ্রের রুপ ? বড় বড় লম্বা লম্বা রক্ষ চুল আসিয়া কপালে ও চক্ষতে পড়িয়াছে, চক্ষ দটী কোটরপ্রবিষ্ট, কিন্তু ধক ধক করিয়া জনলিতেছে, মাখ অতিশয় শতক ও অতিশয় গম্ভীর, শরীরখানি শীর্ণ হইয়াছে, একখানি ময়লা একলাই মাত্র উত্তরীয়। উভয়ে ভিতরে আসিলেন, শরৎ বলিলেন,—বিন্দরদিদি, অনেকদিন আসতে পারিনি, কিছ মনে করো না, আজ বিজয়ার দিন প্রণাম করতে এলেম। বিন্দ। শরৎবাবু, বেচে থাক, দীঘ"জীবী হও, তোমার বে থা হক, সুখে সংসার কর, এইটী যেন চক্ষে দেখে যাই, ভাইকে আর কি আশীব্বাদ করব ? বিন্দরে স্নেহ-গভ বচনে শরতের চক্ষ দিয়া জল পড়িতে লাগিল, শরৎ কোনও উত্তর করিতে পারিলেন না, বিন্দরে পা দটী ধরিয়া প্রণাম করিলেন। বিন্দ অনেক আশীব্বাদ করিয়া তাঁহাকে হাত ধরিয়া তুলিলেন, পরে বলিলেন,—শরৎবাবন, তুমি অনেকদিন এখানে এসনি, তাতে এসে যায় না, প্রত্যহ তোমার খবর পেতেম, জানতেম আমাদের কোনও বিপদ আপদ হলেই তুমি আসবে। কিন্তু অমন করে কি লেখাপড়া করে ? লেখাপড়া আগে না শরীর আগে ? আহা তোমার চক্ষ দটী বসে গেছে, মুখখানি শুকিয়ে গেছে, শরীর জীণ হয়েছে, এমন করে কি দিনরাত জেগে পড়ে ? শরৎবাবু, তুমি বৃদ্ধিমান ছেলে, তোমাকে কি বুঝাতে হয় ? তোমার বিন্দ দিদির কথাটী রেখো, রাত্রিতে ভাল করে ঘামিও, দিনে সময়ে আহার করিও, তোমার মত ছেলে পরীক্ষায় অবশ্য উত্তীণ হবে। শরতের শতক ওঠে একট হাসি দেখা গেল। তিনি ধীরে ধীরে বলিলেন,—বিন্দ দিদি, পরীক্ষা দিতে পারলে কি জীবনের সখেবদ্ধি হয় ? হেমবাব পরীক্ষা বড় দেন নাই, হেমবাবর মত সখী লোক জগতে কয়জন আছে ? বিন্দর। তবে পরীক্ষার জন্যে এত চিন্তা কেন? শরীর মাটি করছ, কেন ? শরৎ । পরীক্ষার জন্যে এক মহত্তেও চিন্তা করি না। বিন্দ। তবে কিসের চিন্তা ? শরৎ উত্তর দিল না, বিন্দকে রকের উপরে বসাইল, আপনি নিকটে বসিল, বিন্দর দুই হাত আপন হস্তে ধারণ করিয়া মাথা হে’ট করিয়া রহিল, ধীরে ধীরে বড় বড় অশ্রুবিন্দ সেই শীণ গণ্ডস্থল বহিয়া বিন্দর হাতে পড়িতে লাগিল। లిసి &