পাতা:রমেশ রচনাবলী (উপন্যাস).djvu/৪৩৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

রমেশ রচনাবলী বিন্দর। এ কি শরৎবাবু! কাঁদছ কেন ? ছি, তোমার কোনও কট হয়েছে ? মনে কোন যাতনা হয়েছে ? তা আমাকে বলছে না কেন? শরৎবাব, ছেলেবেলা থেকে তোমার মনের কোন কথাটী বলনি, আমি কোন কথাটী তোমার কাছে লুকিয়েছি ? এত দিনের স্নেহ কি আজ ভুললে, তোমার বিন্দরদিদিকে কি পর মনে করলে ? শরৎ । বিন্দরদিদি, যেদিন তোমাকে পর মনে করব সেদিন এ জগতে আমার আপনার কেউ থাকবে না। আমার মনের যাতনা তোমার নিকট লকোব না, আমি হতভাগা, আমি পাপিষ্ঠ। বিন্দ দেখিলেন, শরতের দেহ থর থর করিয়া কাঁপিতেছে, নয়ন অগ্নির ন্যায় জনলিতেছে, বিন্দন একটা উদ্বিগ্ন হইলেন, ধীরে ধীরে বলিলেন,—শরৎবাবন, তোমার মনের কথা আমাকে বল, সঙে্কাচ করো না । শরৎ। আমার মনের কথা জিজ্ঞাসা করো না। বিন্দদিদি, আমি ঘোর পাপিষ্ঠ, আমার মন পাপচিন্তায় কৃষ্ণবর্ণ। বন্ধরে গহে এসে আমি অসদাচরণ করেছি, ভগিনীর প্রণয়ের বিষময় ు বিন্দ দিদি, আমার হৃদয়ের কথা জিজ্ঞাসা করো না, আমার হৃদয় ঘোর কলঙ্কে শুকত ! শরৎ বিন্দর হাত দটী ছাড়িয়া দিয়া দই হস্তে বিন্দর দই বাহুদেশ ধরিলেন, এত বলের সহিত ধরিলেন ষে বিন্দর সেই দৰেবল কোমল বাহত রক্তবর্ণ হইয়া উঠিল। শরতের সমস্ত শরীর কাঁপিতেছে, নয়ন হইতে অগ্নিকণা বহিগতি হইতেছে। বিন্দর শরৎকে এরুপ কখনও দেখেন নাই, তাঁহার মনে সন্দেহ হইল, ভয় হইল। সেই আদশ চরিত্র ভ্রাতৃসম শরৎ কি মনে কোনও পাপচিন্তা ধারণ করে ? তাহা বিন্দর সবপ্নেরও অগোচর। কিন্তু অদ্য এই নিস্তন্ধ রাত্রিতে সেই ক্ষিপ্তপ্রায় যুবককে দেখিয়া সেই নিরাশ্রয় রমণীর একটা ভয় হইল। প্রত্যুৎপন্নমতি বিন্দ সে ভয় গোপন করিয়া সম্পস্টস্বরে বলিলেন,—শরৎবাব, তোমাকে বাল্যকাল হতে আমি ভাই বলে জানি, তুমি আমাকে দিদি বলে ডাকতে ; দিদির কাছে ভ্রাতা যা বলতে পারে, নিঃসঙ্কুচিত চিত্তে তা বল। শরৎ । আমি যে অসদাচরণ করেছি, যে পাপচিন্তা মনে ধারণ করেছি, তা ভগিনীর কাছে বলা যায় না, আমি মহাপাপী। বিন্দর সরোষে বলিলেন,—তবে আমার কাছে সে কথা বলবার আবশ্যক নেই, আমাকে ছেড়ে দাও, ভগিনীকে সমান করো। শরৎ বিন্দরে বাহুদ্বয় ছাড়িয়া দিলেন, আপনার মুখখানি বিন্দর কোলে লুকাইলেন, বালকের ন্যায় অজস্র রোদন করিতে লাগিলেন। বিন্দর কিছুই বুঝিতে পারিলেন না। শিশরে ন্যায় যাহার নিম’ল আচরণ, শিশরে ন্যায় যে পদতলে পড়িয়া কাঁদিতেছে, সে কি পাপচিন্তা করিতে পারে? ধীরে ধীরে শরতের মুখখানি তুলিলেন, ধীরে ধীরে আপন অঞ্চল দিয়া তাঁহার নয়নবারি মােছাইয়া দিলেন, পরে আস্তে আস্তে বলিলেন,—শরৎ, তোমার হৃদয়ে এমন চিস্তা উঠতে পারে না, যা আমার শনেবার অযোগ্য । তোমার যা বলবার বল, আমি শনেছি। শরৎ । জগদীশ্বর তোমার এই দয়ার জন্যে তোমাকে সখী করন। বিন্দ দিদি, আর একটী অভয়দান কর, যদি আমার প্রার্থনা বিফল হয়, প্রতিজ্ঞা কর, তুমি এ কথাটী কাকেও বলবে না ? আমার পাপচিন্তা আমার জীবনের সহিত শীঘ্ন লীন হবে, জগতে যেন সে কথা প্রকাশ না হয় । বিন্দন। তাই অঙ্গীকার করলেম। শরৎ তখন মহত্তের জন্য চিন্তা করিলেন, দই হস্ত দ্বারা হৃদয়ের উদ্বেগ যেন বন্ধ করিবার চেন্টা করিলেন, তাহার পর আবার বিন্দর হাত দটী ধরিয়া, তাঁহার চরণ পৰ্য্যন্ত মাথা নামাইয়া অসফটস্বরে কহিলেন, “পণ্যহৃদয়া, সরলা বিধবা সাধার সহিত আমার বিবাহ দাও।” বিন্দ তখন এক মহমত্তের মধ্যে ছয় মাসের সমস্ত ঘটনা বুঝিতে পারিলেন, তাঁহার মাথায় আকাশ ভাঙিয়া পড়িল । শরৎ তখন ক্লিন্টস্বরে বলিতে লাগিল,-বিন্দ দিদি, আমি মহাপাপী। ছমাস হল, যেদিন সন্ধাকে তালপুকুরে দেখলেম, সেইদিন আমার মন বিচলিত হল। পন্তক পাঠ ভিন্ন অন্য ব্যবসা আমি জানতেন না, পুস্তকে ভিন্ন প্রণয় আমি জানতেম না, সেদিন সেই সরলহদয়া, সবগের লাবণ্যে বিভূষিতা, ত্রয়োদশ বৎসরের বালিকাকে দেখে আমি হৃদয়ে অননভূেত ভাব অনুভব C)>や