পাতা:সাহিত্য-মীমাংসা - বিষ্ণুপদ ভট্টাচার্য্য.pdf/১১১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

কাব্য ও অলঙ্কার } e > অলঙ্কারের আত্মভাব মানিয়া লইলে, তুল্যযুক্তিতে লৌকিক নারীসৌন্দর্ষেরও এইরূপ অবস্থাই দাড়ায় বটে। কিন্তু কোনও সৌন্দর্যরসিক ব্যক্তিই ইহা স্বীকার করিয়া লইবেন না। নারীদেহের লাবণ্য আছে—মুক্তাফলের অন্তর্গত তরল কাস্তির ন্যায় যাহার প্রভ । অলঙ্কারের অপসারণের দ্বারা সেই প্রভাতরল জ্যোতিকে অপসারিত করা যায় না। তাহাই নারীসৌন্দর্যের নিদান, তাহাই সৌন্দর্যের আত্মা । কাব্যের স্থলেও অলঙ্কারচু্যতি কাব্যপৌন্দর্যের ব্যাঘাত করিতে পারে না । উপমা, রূপক প্রভৃতি সমস্ত অলঙ্কার শব্দার্থরূপী কাব্যশরীর হইতে সরাইয়া লইলে ও প্রকৃত সাহিত্যিক কবিকর্মের সৌন্দর্যের সম্পূর্ণ বিলোপসাধন করা যায় না। এবং সমস্ত অলঙ্কার বিযুক্ত করিয়া লইলে ও ভূষণহীন কাব্যশরীরের যে কান্তি আপন মহিমায় দীপ্তি পাইতে থাকে, যাহা কাব্যদেহের লাবণ্যস্বরূপ, তাহাই কাব্যবস্তুর আত্মা বলিয়া পরিগণিত হইবার যোগ্য । আনন্দবর্ধনাচার্য প্রমুখ ধ্বনিবাদিগণ কাব্যের এই অস্তর্নিহিত লাবণ্যের সন্ধাম পাইয়াছিলেন, তাই প্রাচীন ভামহ প্রভৃতি পূর্বাচার্যগণের অলঙ্কারের মোহ তাহদের তত্ত্বদৃষ্টিকে আবৃত করিতে পারে নাই । এই লাবণ্যের অপর সংজ্ঞা ‘ধ্বনি’,—‘বস্তুধ্বনি’, ‘অলঙ্কারধ্বনি’, ‘রসধ্বনি' । ইহাদের মধ্যে রসধবনিই শ্রেষ্ঠ কাব্যতত্ত্ব,—তাহা হইতেই কাব্যের উৎপত্তি, তাহাতেই স্থিতি এবং তাহতেই পর্যবসান । সেইজন্য রসধবনিই র্তাহীদের মতে কাব্যের আত্মা । সেই আত্মার সন্ধান যিনি পাইয়াছেন, তিনি কি কখনও অলঙ্কারের মোহে মুগ্ধ হইতে পারেন ? এখানে অনেকেই প্রশ্ন করি:বন : ধ্বনিবাদিগণ কি তবে সাহিত্যক্ষেত্র হইতে উপমা প্রভৃতি অলঙ্কারগুলিকে নিবাসিত করিলেন ? প্রকৃত কবিকর্ম কি তবে একেবারেই নিরলস্কার ? —ধ্বনিলাদের প্রবর্তক আনন্দবর্ধনাচার্য সাহিত্যিক অলঙ্কারসমূহের উপযোগিতা ও মস্তিত্ব আদৌ অস্বীকার করেন নাই। প্রাচীন সাহিত্য-মীমাংসক সম্প্রদায়ের সহিত তাহার বিরোধ শুধু তাহদের প্রকৃত স্বরূপ লইয়। ভামহ, দণ্ডী প্রভৃতি পূর্বাচার্যগণ লৌকিক