পাতা:মেয়েলি ব্রত ও কথা - পরমেশপ্রসন্ন রায় (১৯০৮).pdf/৫৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৪৪
মূলা-ষষ্ঠী

না? তোমরা রাঁধতে জান বটে, কিন্তু মাংস চেন না। এই বলে সে লুকিয়ে কতকগুলি পেঁয়াজ বেটে হাঁড়িতে ফেলে দিলে। পেঁয়াজের গন্ধে বউ তিষ্ঠাতে পারেন না। ভাবলেন পেঁয়াজ দিয়েছে, সর্ব্বনাশ হয়েছে! আর কি মাংস আন‍্লে তাও তো বুঝতে পাচ্ছি না। কিন্তু কা’কে বলি, একথা কার কাছে বলবার নয়, শোনবারও নয়। অনেক ভেবে চিন্তে বউ ঠিক কল্লেন, খাবার জায়গা পিছল করে রাখি, পরিবেশন করবার সময় আমি আছাড় খেয়ে পড়বো, আমার যেন দাঁত কপাটি লেগেছে কথা কইব না। লোকজন রান্নাঘরে ঢুকবে, তবেই হেঁসেলের হাঁড়ি কুড়ি সব নষ্ট হয়ে যাবে, ঠাকুরের খাওয়া হবে না। তবেই যদি ব্রাহ্মণের জাত রক্ষা কত্তে পারি, আর উপায় দেখি না। যা ভাবলেন তাই কল্লেন। ভাতের থানা হাতে ক’রে হঠাৎ পড়ে গেলেন, কথা কইতে পারেন না। পাড়ার লোকে রান্নাঘর ভ’রে গেল। ব্রাহ্মণের খাওয়া হলো না। জাত রক্ষা হলো। তারপর বউ সুস্থ হয়ে উঠলেন। শ্বশুরের প্রশ্নে মিছে কথা বলা যায় না। বউ ঝির উপর সন্দেহের কথা প্রকাশ কল্লেন, আর জাত রক্ষার জন্যে যা যা করেছিলেন সব বল্লেন। তখনি খোঁজ খবর করাতে দাসীর বাছুর কাটার কথা প্রকাশ হয়ে পড়লো। তা শুনে সকলের মাথায় যেন আকাশ ভেঙ্গে পড়লো। সে দিন অঘ্রাণ মাসের শুক্লাষষ্ঠী। বউ ছেলে বেলা হ’তে ষষ্ঠী ব্রত করতেন। ব্রত ক’রে পূজার জল দুর্ব্বা যেখানে বাছুরের হাড়-গোড় ছিল তার উপরে ছড়িয়ে দিলেন। তখনই মরা বাছুর বেঁচে উঠলো। সকলে অবাক হয়ে গেল। ব্রাহ্মণ ভাবলেন, বউ তো নয়, স্বয়ং লক্ষ্মী!