ইন্দ্র কহিল, না, তোমাকে বিশ্বাস নেই, তুমি খুন কর্তে পার। আমি তোমার হাত বাঁধব। বলিয়া তাহারই গেরুয়ারঙে ছোপানো পাগ্ড়ি দিয়া টানিয়া টানিয়া তাহার দুই হাত জড় করিয়া বাঁধিয়া ফেলিল। সে বাধা দিল না, প্রতিবাদ করিল না, একটা কথা পর্য্যন্ত কহিল না।
যে লাঠিটার আঘাতে দিদি অচৈতন্য হইয়া পড়িয়াছিল সেটা তুলিয়া লইয়া একপাশে রাখিয়া ইন্দ্র কহিল, কি নেমক্হারাম সয়তান এই ব্যাটা। বাবার কত টাকা যে চুরি ক’রে একে দিয়েছি, আরও কত হয় ত দিতাম, যদি দিদি না আমাকে মাথার দিব্যি দিয়ে নিষেধ কর্ত। আর স্বচ্ছন্দে ও, ঐ বল্লমটা আমাকে ছুঁড়ে মেরে বস্ল! শ্রীকান্ত, নজর রাখ্, যেন না ওঠে—আমি দিদির চোখেমুখে জলের ঝাপ্টা দিই।
জলের ঝাপ্টা দিয়া বাতাস করিতে করিতে কহিল, যেদিন থেকে দিদি বল্লে, ইন্দ্রনাথ, তোমার রোজগারের টাকা হ’লে নিতাম, কিন্তু এ নিয়ে আমাদের ইহকাল পরকাল মাটী কর্ব না, সেই দিন থেকে ঐ সয়তান ব্যাটা দিদিকে কত মার মেরেচে, তার হিসেব-নিকেশ নেই। তবু দিদি ওকে কাঠ কুড়িয়ে, ঘুঁটে বেচে খাওয়াচ্ছে, গাঁজার পয়সা দিচ্চে—তবু কিছুতে ওর হয় না। কিন্তু আমি ওকে পুলিশে দিয়ে তবে ছাড়্ব—না হ’লে দিদিকে ও খুন ক’রে ফেল্বে, ও খুন কর্তে পারে!
আমার মনে হইল, লোকটা যেন এই কথায় শিহরিয়া মুখ তুলিয়া চাহিয়াই তৎক্ষণাৎ মুখখানা নত করিয়া ফেলিল। সে একটি নিমেষ মাত্র। কিন্তু অপরাধীর নিবিড় আশঙ্কা তাতে এম্নি পরিস্ফুট হইতে দেখিয়াছিলাম যে, আমি আজিও তাহার তখনকার সেই চেহারাটা স্পষ্ট মনে করিতে পারি।
আমি বেশ জানি, এই যে কাহিনী আজ লিপিবদ্ধ করিলাম, তাহাকে সত্য বলিয়া গ্রহণ করিতে লোকে দ্বিধা ত করিবেই, পরন্তু উদ্ভট-কল্পনা