সুকুমার সমগ্র রচনাবলী (প্রথম খণ্ড)/বিবিধ কবিতা/নূতন বৎসর

উইকিসংকলন থেকে
পুণ্যলতা চক্রবর্তী, কল্যাণী কার্লেকর সম্পাদিত
(পৃ. ১৬০)

নূতন বৎসর

'নূতন বছর! নূতন বছর!’ সবাই হাঁকে সকাল সাঁঝে,
আজকে আমার সুর্যিমামার মুখটি জাগে মনের মাঝে।
মুস্কিলাসান করলে মামা, উস্কিয়ে তার আগুনখানি,
ইস্কুলেতে লাগলো তালা, থামলো সাধের পড়ার ঘানি।


এগ্‌জামিনের বিষম ঠেলা চুকলো রে ভাই, ঘুচলো জ্বালা,
নূতন সালের নূতন তালে হোক তবে আজ ‘হকি'র পালা
কোন্‌খানে কোন্ মেজের কোণে, কলম কানে চশমা নাকে,
বিরামহারা কোন্ বেচারা দেখেন কাগজ, ভয় কি তাঁকে?


অঙ্কে দেবেন ‘হকি'র গোলা, শঙ্কা তো নাই তাহার তরে,
তংকা হাজার মিলুক তাঁহার, ডঙ্কা মেরে চলুন ঘরে।
দিনেক যদি জোটেন খেলায় সাঁঝের বেলায় মাঠের মাঝে,
‘গোল্লা’ পেয়ে ঝোল্লা ভরে আবার নাহয় যাবেন কাজে!


আয় তবে আয় নবীন বরষ! মলয় বায়ের দোলায় দুলে,
আয় সঘনে গগন বেয়ে, পাগলা ঝড়ের পালটি তুলে।
আয় বাংলার বিপুল মাঠে, শ্যামল ধানের ঢেউ খেলিয়ে,
আয় রে সুখে ছুটির দিনে, আমকাঁঠালের খবর নিয়ে!


আয় দুলিয়ে তালের পাখা, আয় বিছিয়ে শীতল ছায়া,
পাখির নীড়ে, চাঁদের হাটে, আয় জাগিয়ে মায়ের মায়া।
তাতুক না মাঠ, ফাটুক না কাঠ, ছুটুক না ঘাম নদীর মতো
জয় হে তোমার নূতন বছর! তোমার যে গুণ গাইব কত?


পুরান বছর মলিন মুখে যায় সকলের বালাই নিয়ে,
ঘুচলো কি ভাই মনের কালি সেই বুড়োকে বিদায় দিয়ে?
নূতন সালে নূতন বলে নূতন আশায় নূতন সাজে,
আয় দয়ালের নাম লয়ে ভাই, যাই সকলে যে যার কাজে!

সন্দেশ-১৩২২