ছড়া/বাসাখানি গায়ে-লাগা আর্মানি গির্জার

উইকিসংকলন থেকে

বাসাখানি গায়ে-লাগা আর্মানি গির্জার―
দুই ভাই সাহেবালি জোনাবালি মির্জার।
কাবুলি বেড়াল নিয়ে দু দলের মােক্তার
বেঁধেছে কোমর, কে যে সামলাবে রােখ তার।
হানাহানি চলছেই একেবারে বেহোশে,
নালিশটা কী নিয়ে জানে না তা কেহ সে।
সে কি লেজ নিয়ে, সে কি গোঁফ নিয়ে তক্‌রার,
হিসেবে কি গােল আছে নখগুলাে বখরার।
কিংবা মিয়াঁও বলে থাবা তুলে ডেকেছিল,
তখন সামনে তার দু ভাইয়ের কে কে ছিল।
সাক্ষীর ভিড় হল দলে দলে তা নিয়ে,
আওয়াজ যাচাই হল ওস্তাদ আনিয়ে।
কেউ বলে ধা-পা-নি-মা কেউ বলে ধা-মা-রে—
চাই চাই বােল দেয়, তবলায় ঘা মারে।
ওস্তাদ ঝেঁকে ওঠে, প্যাঁচ মারে কুস্তির—
জজ সা’ব কী করে যে থাকে বলে সুস্থির।

সমন হয়েছে জারি, কাবুলের সর্দার
চলে এল উটে চড়ে, পিছে ঝাডু বর্দা‌র।
উটেতে কামড় দিল, হল তার পা টুটা—
বিলকুল লােকসান হয়ে গেল হাঁটুটা।
খেসারত নিয়ে মাথা তেতে ওঠে আমিরের,
ফউজ পেরিয়ে এল পাঁচিলটা পামিরের।
বাজারে মেলে না আর আখরােট খােবানি,
কাঁউসিল ঘরে আজ কী নাকানি-চোবানি।
ইরানে পড়েছে সাড়া গবেষণা-বিভাগে—
এ কাবুলি বিড়ালের নাড়ীতে যে কী ভাগে
বংশ রয়েছে চাপা, মেসােপোটেমিয়ারই
মার্জারগুষ্টির হবে সে কি ঝিয়ারি।
এর আদি মাতামহী সে কি ছিল মিশােরী—
নাইল-তটিনীতট-বিহারিণী কিশােরী।
রোঁয়াতে সে ইরানী যে নাহি তাহে সংশয়,
দাঁতে তার এসীরিয়া যখনি সে দংশয়।
কটা চোখ দেখে বলে পণ্ডিতগণেতে,
এখনি পাঠানাে চাই Wimবিল্‌ডনেতে।
বাঙালি থিসিসওলা পড়ে গেছে ভাব্‌নায়,
ঠিকুজি মিলবে তার চাটগাঁ কি পাবনায়।
আর্মানি গির্জার আশেপাশে পাড়াতে
কোনোখানে এক তিল ঠাঁই নাই দাড়াতে।

কেম্ব্রিজ খালি হল, আসে সব স্কলারে—
কী ভীষণ হাড়কাটা করাতের ফলা রে।
বিজ্ঞানীদল এল বর্লিন ঝাঁটিয়ে,
হাত-পাকা জন্তুর-নাড়ীভুঁড়ি-ঘাঁটিয়ে।
জজ বলে, বিড়ালটা কী রকম জানা চাই,
আইডেন্‌টিটি তার আদালতে আনা চাই।
বিড়ালের দেখা নাই—ঘরেও না, বনে না,
মিআঁউ আওয়াজটুকু কেউ আর শোনে না।
জজ বলে সাক্ষীরে কোন্‌খানে ঢুকোলাে,
অত বড় লেজের কি আগাগােড়া লুকোলে।
পেয়াদা বললে, লেজ গেছে মিউজিয়মে
প্রিভিকৌঁসিলে-দেওয়া আইনের নিয়মে।
জজ বলে, গোঁফ পেলে রবে মাের সম্মান
পেয়াদা বললে, তারাে নয় বড়াে কম মান,
মিউনিকে নিয়ে গেছে ছাঁটা গোঁফ যত্নেই,
তারে আর কোনােমতে ফেরাবার পথ নেই।
বিড়াল ফেরার হল, নাই নামগন্ধ—
জজ বলে, তাই বলে মামলা কি বন্ধ।
তখনি চৌকি ছেড়ে রেগে করে পাচারি,
থেকে থেকে হুংকারে কেঁপে ওঠে কাছারি।
জজ বলে, গেল কোথা ফরিয়াদী আসামী!
হুজুর-পেয়াদা বলে, বেটাদের চাষামি!

শুনি নাকি দুই ভাই উকিলের তাকাদায়
বলে গেছে, আমাদের বুঝি বেঁচে থাকা দায়
কণ্ঠে এমনি ফাঁস এটে দিল জড়িয়ে,
মােক্তারে কী করিবে সাক্ষীরে পড়িয়ে॥


 উদয়ন
১৮ ফেব্রুয়ারি ১৯৪০