পাতা:Intermediate Bengali Selections.pdf/১৩৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

কপালকুণ্ডলা নীল, অনন্ত সমুদ্র। উভয়পার্থে যতদূর চক্ষু যায়, ততদূর পর্য্যন্ত তরঙ্গ-ভঙ্গ-প্রক্ষিপ্ত ফেনার রেখা; স্তুপীকৃত বিমল কুসুমদামগ্রথিত মালার ন্যায় সে ধবল ফেনরেখা হেমকান্ত সৈকতে ন্যস্ত হইয়াছে, কাননকুন্তলা ধরণীর উপযুক্ত অলকাভরণ নীল জলমণ্ডলমধ্যে সহস্ৰ স্থানে সফেন তরঙ্গ-ভঙ্গ হইতেছিল। যদি কখনও এমন প্রচণ্ড বায়ু-বহন সম্ভব হয় যে, তাহার বেগে নক্ষত্রমালা সহস্ৰে সহস্ৰে স্থানচ্যুত হইয়া নীলাম্বরে আন্দোলিত হইতে থাকে, তবে সে সাগরতরঙ্গক্ষেপের স্বরূপ দৃষ্ট হইতে পারে। এ সময়ে অস্তগামী দিনমণির মৃদুল কিরণে নীলজলের একাংশ দ্রবীভূত সুবর্ণের ন্যায় জ্বলিতেছিল। অনতিদূরে কোন ইউরোপীয় বণিকজাতির সমুদ্রপোত শ্বেতপক্ষ বিস্তার করিয়া বৃহৎ পক্ষীর ন্যায়। জলধিহীদয়ে উড়িতেছিল। কতক্ষণ যে নবকুমার তীরে বসিয়া অনন্যমনে জলধিশোভা দৃষ্টি করিতে লাগিলেন, তদ্বিষয়ে তৎকালে তিনি পরিমাণ-বোধ-রাহিত। পরে একবারে প্রদোষতিমির আসিয়া কাল জলের উপর বসিল। তখন নবকুমারের চেতনা হইল যে, আশ্রম সন্ধান করিয়া লইতে হইবে। দীর্ঘনিশ্বাস ত্যাগ করিয়া গাত্রোখান করিলেন। দীর্ঘনিশ্বাস ত্যাগ করিলেন কেন, তাহা বলিতে পারি না।—তখন তাহার মনে কোন ভূতপূর্ব সুখের উদয় হইতেছিল, তাহা কে বলিবে? গাত্রোখান করিয়া সমুদ্রের দিকে পশ্চাৎ ফিরিলেন। ফিরিবামাত্র দেখিলেন অপূর্ব মূর্ত্তি! সেই গভীরনাদী বারিধি-তীরে, সৈকত ভূমে, অস্পষ্ট সন্ধ্যালোকে দাড়াইয়া অপূর্ব রমণীমূর্ত্তি! কেশভার-অবেণীসংবদ্ধ, সংসর্পিত, রাশীকৃত, আণ্ডলাফলখিত কেশভার; তদগ্রে দেহরত্ন, যেন চিত্রপটের উপর চিত্র দেখা