পাতা:অপরাজিত - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/২৩৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

অপরাজিত RSX কালো হইয়া যায় । ওদিকে দিগন্তু লক্ষীর ললাটে আলোর টিপের মত সন্ধ্যাতারা ফুটিয়া উঠে, অরণ্যানী ঘন অন্ধকারে ভরিয়া যায়, শাল ও পাহাড়ী বাঁশের ডালপালায় বাতাস লাগিয়া একপ্রকার শব্দ হয়- রামচরিত ও জহুরী সিং নেকড়ে বাঘের ভয়ে আগােন জৰালে, চারিধারে শিয়াল ডাকিতে শার করে, বন-মোরগ ডাকে, অন্ধকার আকাশে দেখিতে দেখিতে গ্রহ, তারা, জ্যোতিৎক, ছায়াপথ একে - একে দেখা দেয় । পথিবী, আকাশ-বাতাস অপােব রহস্যভরা নিস্তব্ধতায় ভরিয়া আসে, তােবর পাশের দীঘি, ঘাসের বন দলাইয়া এক একদিন বন্যবরাহ পলাইয়া যায়, দরে কোথায় হয়ে না। উন্মাদের মত হাসিয়া উঠে, গভীর রাত্রে কৃষ্ণপক্ষের ভাঙা চাঁদ পাহাড়ের পিছন হইতে ধীরে ধীরে উঠতে থাকে, এ যেন সত্যই গল্পের বইয়ে-পড়া জীবন । এক এক দিন বৈকালে সে ঘোড়ায় চড়িয়া বেড়াইতে যায় । শােধই উচুনীচু অধশক্ষক তৃণভূমি ; ছোট বড় শিলাখণ্ডড ছড়ানো, মাঝে-মাঝে শাল ও বাদাম গাছ । আর এক জাতীয় বড় বন্য গাছের কি অপবর্ণ আঁকাবাঁকা ডালপালা, চৈত্রের রৌদ্রে পাতা ঝরিয়া গিয়াছে, নীল আকাশের পটভূমিতে পত্রশান্য ডালপালা যেন ছবির মত দেখা যায়। অপর তাঁব হইতে মাইলতিনেক দূরে একটা ছোট পাহাড়ী নদী অকিয়া বকিয়া গিয়াছে, অপ, তাহার নাম রাখিয়াছে বক্রতোয় । গ্রীষ্মকালে জল আদৌ থাকে না, তাহারই ধারে একটা শাল-ঝাড়ের নিচের একখানা পাথরের উপর সে এক একদিন গিয়া বসে, ঘোড়াটা গাছের ডালে বধিয়া রাখে-স্থানটি ঠিক ছবির মত । সৰুণাভ বালার উপর অস্তহিত বন্যানদীর উপল-ঢাকা চরণ-চিহ্ন-হাত কয়েক মাত্র প্রশান্ত নদীখাত, উভয় তীরই পাষাণময়, ওপারে কঠিন ও দানাদার কোয়ার্টজাঁইট ও ফিকে হলদে রঙের বড় বড় পাথরের চাইয়ে ভরা, অতীত কোন হিমযাগের তুষার নদীর শেষ প্রবাহে ভাসিয়া আসিয়া এখানে হয়ত আটকাইয়া গিয়াছে, সোনালী রংয়ের নদী-বাল হয়ত সবণ রেণ মিশানো, অস্ত্য-সহযোির রাঙা আলোয় অত চকচক করে কেন নতুবা ? নিকটে সিগন্ধ লতাকিস্তুরীর জঙ্গল, খরা বৈশাখী রৌদ্রে শশক শান্টিগলি ফাটিয়া মগনভির গদ্ধে অপরাহের বাতাস ভারাক্লান্ত করিয়া তুলিয়াছে। বক্রতোয়া হইতে খানিকটা দরে ঘন বনের মধ্যে পাহাড়ের গায়ে একটা ছোট ঝরণা, যেন উচু চৌবাচ্চা ছাপাইয়া জল পড়িতেছে এমন মনে হয়। নিচের একটা খাতে গ্রীষ্মমদিনেও জল থাকে । রাত্রে ওখানে হরিণদের দল জল খাইতে আসে। শনিয়া অপর কতবার দেড় প্রহর রাত্রে ঘোড়ায় চড়িয়া সেখানে গিয়াছে, কখনও দেখে নাই । গ্রীছম গেল, ধষাও কাটিল, শরৎকালে বন্য শেফালীবনে অজস্র ফুল ফুটিল, বক্রতোয়ার শাল-ঝাড়টার কাছে বসলে তখনও ঝরণার শব্দ পাওয়া যায়-এমন সময়ের এক জ্যোৎস্যনারাত্রে সে জাহারী সিংকে সঙ্গে লইয়া জায়গাটাতে গেল । দশমীর জ্যোৎপাদনা ডালে-পাতায় পাহাড়ী বাদাম বনের মাথায়ী-দিনপদ্ধ বাতাসে শেফালীর ঘন মিশষ্ট গন্ধ । এই জ্যোৎস্না-মাখা বনভূমি, এই রাত্রির স্তবধতা, এই শিশিরাদ্র নৈশ বায়ন-এরা যেন কত কালের কথা মনে করাইয়া দেয়, যেন দরে কোনও জন্মান্তরের কথা ।