পাতা:অবনীন্দ্র রচনাবলী তৃতীয় খণ্ড.djvu/৩৪০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

আর আমরা সব পাখির মিলে সেখানে গিয়ে বাসা বেঁধে ডিমে তা দিয়ে বাচ্ছা ফুটিয়ে চলে আসি। বসন্তের শেষে পালতি জলায় বাচ্ছারা বড়ো হবার জন্যে আপনারাই উড়ে আসে, আমরা সারা বছর দেশে-বিদেশে ঘুরে আবার বছরের এই সময়টিতে গিয়ে দেখি আমাদের ছেলে-পিলেরা কেউ বড়ো হয়েছে, কেউ বড়ো হয়ে নিজের পৃথ দেখে নিতে বিদেশে চলেছে, কোনো-কোনো বাচ্ছ বা মরে গেছে, কেউ-কেউ বা এরি মধ্যে বিয়ে-থাওয়া করে ঘরকন্ন পাতবার চেষ্টায় আছে, কোনো বাচ্ছা বা সন্ন্যাসী হয়ে দেশ ছেড়ে বেরিয়ে গেছে, কাউকে ধরে মানুষে খেয়ে ফেলেছে, কাউকে মামুষে গুলি করে মেরে ফেলেছে আর কাউকে বা তারা জেলখানার মতো খাচায় ভরেছে, আর কাউকে বা ডানা কেটে পোষ মানিয়ে ছেড়ে দিয়েছে । বছরের এই সময়টিতে আমরা একবার করে নিজেদের জন্মস্থানে আর পুরোনো বাসায় ফিরে আসতে পাই, নিজের ছেলেমেয়ের দেখা পাই, মুখ হুঃখের দুটো কথা কয়ে নিই, তারপর আবার চলি এ-দেশ সে দেশ করে । রিদয় বলে উঠল –‘আমারো তো দেশ আছে কিন্তু আমার তো সেখানে ফিরতে একটুও ইচ্ছে হয় না।’ চকা বললে –‘সে কী ! তোমার বাপ-মা কেউ নেই নাকি ? যখন বড়ো হবে, বৌ হবে সংসার হবে, ছেলে-পুলে নাতি-পুতি হবে তখন বুঝবে সারা বছরের পরে দেশে ফিরতে কী আনন্দ । তখন দেশের ডাক যখন এসে পৌছবে তখন দেখবে মন আমনি উধাও হয়ে ছুটেছে আর কিছুতে মন বসছে না, প্রাণ নীল আকাশে প্রজাপতির মতো সোনার পাখনা মেলে দিয়ে উড়ে পড়তে চাচ্ছে, তখন দেশের কথাই কইতে থাকবে । এর সঙ্গে তার সঙ্গে, দিন নেই রাত নেই, কী সকাল কী সন্ধ্যে কেবল বঁধুর মুখ মধুর হাসিই মনে জাগবে তখন।’ চকার কথা শুনতে শুনতে রিদয় কেমন আনমনা হয়ে গেল । সারাদিন ধরে আজ তার কেবলি মনে পড়তে লাগল —আমতলির ৩২৮