পাতা:অবনীন্দ্র রচনাবলী প্রথম খণ্ড.djvu/২৩৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

গাছের গোড়ায় ; কাচের না কিসের ঢাকা দিলেন উপরে। বাবামশায়ের উদ্ভিদবিদ্যা সম্বন্ধে বড়ো বড়ো বই এখনো নীচের তলায় আলমারি-ঠাসা । কত বই দেশ-বিদেশ থেকে আনিয়ে পড়েছেন। গাছ সম্বন্ধে যে বইটি তিনি সর্বদ পড়তেন, সোনার জলে বাধানে, সবুজ চামড়ায় মোড়, যেন কত মূল্যবান একটি কবিতার বই। বড়ো হয়ে খুলে দেখি, সেই হাপার কোম্পানির নানারকম ফল ফুল গাছের সচিত্র তালিকা। ত, টিউলিপের গেড় লাগানো হল, ভাগবত মালীকে শিখিয়ে দিলেন, রোজ তাতে কী করবে, কী করে যত্ব নিতে হবে। তিনিও নিজে এসে একবার দুবার করে দেখে যান। একদিন সেই ফুল ফুটল— একটি ফুল। ফুল ফুটেছে, ফুল ফুটেছে। ওই একটি ফুলের জন্য বাড়িতে হৈ-চৈ পড়ে গেল। সবাই আসে দেখতে । যে ফুল ফোটে না এই দেশে সেই ফুল ফুটল শেষে। বাবামশায় খুব খুশি । ফুল ফোটাতে শখ হয়েছিল, ফুল ফুটল । হটিকালচারের সাহেব খবর শুনে ছুটে এলেন। তিনি অবাক। কত চেষ্টা করেও র্তারা পারেন নি। বললেন, ‘একৃজিবিশনে দেখাতে হবে । শিগগিরই হার্টিকাল্‌চারের একৃজিবিশন হবে । ভাগবত রঙিন চাদর বেঁধে পরিষ্কার ধুতিজামা পরে তৈরি হয়ে এল, তাকে দিয়ে ফুল পাঠানো হল । একজিবিশনে সেই ফুলটির জন্য একটি সোনার মেডেল পেলেন বাবামশায়। সেই সোনার মেডেল আর একটি গাছকাটা কাচি ভাগবতকে তিনি বকশিশ দিলেন। বললেন, ‘নে মেডেলটা তুইই গলায় ঝোলা।’ মেডেলটা দিয়ে এক সময়ে হয়তো সে ছেলের গয়না গড়িয়ে দিয়েছিল, কিন্তু কাচিট কখনো ছাড়ে নি। আমাদের কতবার বলত, ‘বাবুর দেওয়া এই র্কাচি ।” সেদিন বড়ো মজা লাগল। এই কিছুদিন আগের কথা । জোড়াসাঁকোর বাড়িতে বারান্দায় বসে আছি। ভাগবত মরে গেছে অনেক দিন আগে, তার ছেলে এখন বাগানে কাজ করে। বাগানের কোনায় ছিল করবীগাছ। ছোটো ছেলে বাপের হাতের সেই কাচি নিয়ে তার ডাল ছাটবার চেষ্টা করছে, কিছুতেই আর সামলাতে পারছে না, হাত আগডালে পৌছয় না তার। গাছের ডালপাত হাওয়াতে দুলে দুলে ছেলেটিকে জাপটে ধরছে, কাচি হাতে সে তার ভিতরে আটকা পড়ে অস্থির । বসে আমি মজা দেখছি আর হাসছি। মোহনলাল শোভনলাল যাচ্ছিল সেখান দিয়ে, তাদের বললুম, ‘ওরে দেখ, মজা দেখ, ভাগবতের ছেলে তার বাপের লাগানো গাছের সঙ্গে কেমন খেলা করছে দেখ, । ২১৬