পাতা:অবনীন্দ্র রচনাবলী প্রথম খণ্ড.djvu/২৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

কালে চামড়ার মোষোকটা ঘাড় তুলে ই করে জল খায়, যেন একটা জল-জন্তু ; পেটটা তার ক্রমেই ফুলতে ফুলতে চকচক করতে থাকে। মোষোকটা ফাটার উপক্রম হতেই ভিস্তি একটা সরু চামড়ার গলাট দিয়ে সেটাকে বেঁধে নিয়ে গায়ের জল মুছিয়ে যেন পোষা জানোয়ারের মতো পিঠে তুলে নিয়ে চলে যায়, খানিক দৌড়, খানিক আস্তে চলা মিলিয়ে একটা চমৎকার চালে মাটির দিকে বুক ঝুঁকিয়ে। বাধা কাজে বাধা ভিস্তি, তার চাল-চোল সমস্তই এমন বাধা ছিল যে মনেই আসত না সে মরতে পারে, বদলাতে পারে। ঘড়ির মতো দস্তুরমাফিক বাপ নিয়মে কাজ বাজিয়ে চলত ; দাড়াত যেখানকার সেখানে, জল ভরত যেখানকার সেখানে, চলে যেতও যেখানকার সেখানে দিনের পর দিন । তার চেহারা দেখি নি ; শুধু তার চলার ভঙ্গি, কাপড়ের রঙ– এই বিশেষত্ব দিয়েই তাকে আমি দেখতে পাই—সেকাল একাল সব কালেই সে একই ভিস্তি । কাকগুলোও যে-ভাবে কালের পরিবর্তন ছাড়িয়েছে, ভিত্তিগুলোও সেই ভাবে তখনে যে এপনে সে রয়েছে ভিস্তিই। কৃষ্ণনগরের ভিস্তি পুতুল, যাত্রার সgজ ভিস্তি, বহুরূপীব ভিস্তি, আরব্য উপন্যাসের ভিস্তি— সবগুলোর সঙ্গে মিলে আছে সেই পঞ্চাশ বছর আগেকার ভিস্তি একজন, যে ঘড়ি ধরে জল ভরত মোষোকে । সেই সেকালের ভিস্তির বেশে বা চেহারায় যদি একটু বিশেষত্ব থাকত তবে একালের ভিস্তির সঙ্গে অভিন্ন হতে পারতই না সে —সে যেন একটা সনাতন চিরন্তন জীবের মতো তখনো ছিল এখনো আছে । ভিস্তি চলে যাবার সঙ্গে সঙ্গেই মাথায় ফেটি বেঁধে দু'হাতে দুই বাট নিয়ে দেখা দিত একটা মানুষ । জাতে সে ডোম, তার নাম ছিল শ্রীরাম, কিন্তু ডাকত সবাই ছীরে বলে । সে দুই হাত খেলিয়ে চটপট দুটো কলমের মতো করে কাটা বঁটা বুলিয়ে যায়। নিমেষে সব রাস্তাই ঢেউ খেলানো দুই প্রস্থ রেখায় অতি আশ্চর্য অতি পরিষ্কার ভাবে নকশা টানা হয়ে যায়। চমৎকার চুনোট-করা গেরুয়া কাপড়ে সমস্ত সদর রাস্তাটা যেন মোড়া হয়ে থাকে খানিকক্ষণ ধরে। রাস্তার আর্টস্ট, ধুলোর আর্টস্ট, ডবল বঁটার আর্টিন্ট— তার কাজ দেখে চোখ ভুলে থাকত কতক্ষণ । আমরা যেমন ছবির নানা কাজে নানা রকম সরু মোট ভোতা চেটালো তুলি রাখি, আমাদের ছীরে মেথরও কাছে রাখত রকম-বেরকম বঁটা। রাস্তার বাট ছিল তার কলমের মতে ডগায় একধারে ছোলা ; জলের নর্দমা পরিষ্কার করবার জন্তে রাখত লে ›ፃ ख्य $॥२