পাতা:অভিযাত্রিক - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৩৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

অভিযাত্রিক

তিনি আমার কলকাতার ভাড়া দিলেন-তাই নিয়ে আবার কলকাতায় ফিরি। কেশোরামজি শুনে হাসতে হাসতে বললেন- তবেই আপনি আমাদের কাজ করেচেন ! মনিঅৰ্ডার ধরতে পারলেন না, তবে আপনি ফি বারই কি টাকা নিতে কলকাতায় আসবেন নাকি ? আমি বললুম- এবার থেকে নোট রেজিস্ট্রি খামে পাঠাবেন, নইলে বিদেশে এই রকমই কাণ্ড । মুসলমান ভদ্রলোকের ঠিকানাতে কেশোরামজি অনেক ধন্যবাদ জানিয়ে নিজেই তার টাকাটা পাঠিয়ে দিলেন। কতদিনের কথা, ভদ্রলোকের নাম পর্যন্ত মনে নেই-কিন্তু তার সে উপকার জীবনে কখনো ভুলবো না। বিশেষ করে আজকাল হিন্দু-মুসলমানের এই বিবাদের দিনে সে কথা বেশি করে আমার মনে পড়ে।

বরিশালে গেলুম মাদারিপুর থেকে স্টীমারেই। আড়িয়ল খাঁ নদীর ওপর দিয়ে স্টীমার কিছুদূর গিয়ে পড়ে কালাবদর নদীতে, তারপর মেঘনার মুখ দিয়ে ঘুরে যায়। পূর্ববঙ্গের নদীপথের শোভা যারা দেখেচেন, তাদের চোখের সামনে সেই সুন্দরবন দিয়ে ঘেরা গ্রামগুলির ছবি আবার ভেসে উঠবে এ গায়ের কথা উল্লেখ করলেই। আমি সেই একটিবার মাত্র ওপথে যাই, আর কখনো যাইনি–কিন্তু মনের পটে সে সৌন্দর্য আঁকা হয়ে গিয়েচে চিরকালের জন্যে । কত রোমান্সের এরা স্বপ্ন জাগায়-কত নতুন স্বষ্টির সাহায্য করে। মানুষের অন্তরের বিচিত্র অনুভূতিরাজির সন্ধান যেন মেলে এদের শ্যমল পরিবেশের মধ্যে ; যত অপরিচয়, ততই স্ফুর্তি, ততই আনন্দ । দিনে রাতে, সন্ধ্যায় জ্যোৎস্নায় এদের নিয়েই স্বপ্ন-পসারীর কত কারবার !

তবে কথা এই, সন্ধ্যাবেলায় নৌকা ভিড়লে গ্রামের ঘাটে, বেসাতি করি কখন ? কত ধান ক্ষেত, খেজুর গাছ, তারাভরা রাত। সন্ধ্যায় গ্রামের বধুর কলসী কাকে জল নিতে এসে গা ধুয়ে নিলে, জলের আলপনা