বিষয়বস্তুতে চলুন

পাতা:অলৌকিক নয় লৌকিক (প্রথম খণ্ড) - প্রবীর ঘোষ.pdf/১৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
কিছু কথা
১৭

হুজুর-মজুর সম্পর্কের অবসানের কথা বলা রাজনৈতিক দলগুলােও
সংসদীয় নির্বাচনে অংশ নিতে গিয়ে ভােট সংগ্রহকে অত্যধিক
গুরুত্ব দিয়ে ফেলেছে। ফলে মানুষের অন্ধবিশ্বাস, ভ্রান্ত
ধারণা দূর করতে গিয়ে মানুষের বিশ্বাসকে আঘাত
করার চেয়ে ভােটার-তােষণনীতিকেই অভ্রান্ত
অস্ত্র হিসেবে মনে করতে শুরু করেছে।

 তাই তথাকথিত ধর্ম-বিশ্বাসকে আঘাত হানার সময় এলে কৌশল হিসেবে কে কখন কতটুকু মুখ খুলবে—এটাই তাদের কাছে বড় প্রশ্ন হয়ে দেখা দিচ্ছে। কেন সংসদীয় গণতন্ত্রে ঢোকা, তা বিস্মৃত হলে উপলক্ষই লক্ষ্যকে ছাপিয়ে যাবে—এটাই স্বাভাবিক।

 এটা মনে রাখা একান্তই প্রয়োজন সমস্যার মূল উৎপাটনের চেষ্টা না করে বিচ্ছিন্নভাবে সতী মন্দির বা রাম-শিলা পুজোর বিরোধিতা করে কুসংস্কারের নোংরা আবর্জনা দূর করা যাবে না, মানুষের আবেগকে কাজে লাগিয়ে দলে ভারী করা যেতে পারে মাত্র। সতী পুজো বা রাম-শিলার পুজো যেমন বিশ্বাস-নির্ভর, একইভাবে সমস্ত দেবতা ও অবতারের পুজোই একান্ত বিশ্বাস-নির্ভর। যতদিন মানুষের মনে “আত্মা অবিনশ্বর” এই যুক্তিহীন বিশ্বাস থাকবে ততদিন সতী মন্দির সহ নানা মৃত বাবাজি-মাতাজিদের মন্দির থাকবে, ওইসব মৃত বাবাজি-মাতাজিদের কৃপা লাভের আশায়। যতদিন ঈশ্বর নামক কল্পনা মানুষের চেতনায় বিশ্বাস হয়ে বিরাজ করবে, ততদিন রাম-রহিমসহ অন্যান্য ঈশ্বরের পুজোও চলতেই থাকবে। সতী ও রামের পুজো বন্ধ করলে তার পরিবর্তে স্বভাবতই সৃষ্টি করা হবে ‘কৃষ্ণ-চক্র’, ‘বজরঙ-ধ্বজা’ ইত্যাদি নিয়ে ধর্ম উন্মাদনা। কোটি কোটি দেবতা আর লক্ষ লক্ষ অবতার থাকতে উন্মাদনা সৃষ্টিতে অসুবিধে কোথায়? রাম গেলে, রামকৃষ্ণ আসবে—এমনটাই তো অবধারিত।

 প্রায় সব রাজনৈতিক দলই মৌলবাদের বিরুদ্ধে মৌখিকভাবে সোচ্চার। কিন্তু তারা কেউই সমস্যার মূলে যেতে নারাজ। তবে কি এরা প্রত্যেকেই জনসাধারণের চেতনাকে বেশি দূর পর্যন্ত এগিয়ে নিয়ে যেতে ভীত? ভাত, কাপড় ও বাস-সমস্যার সমাধানের পাশাপাশি সাধারণ মানুষের চিন্তার ভ্রান্তি, দীনতা দূর করতে সচেষ্ট না হলে, উন্নততর চিন্তার খোরাক দিতে না পারলে তার পরিণাম কী, পৃথিবী জুড়ে প্রগতির কাঁটাকে উলটো দিকে ঘোরাবার চেষ্টাতেই প্রকট।

 ‘ভারতীয় বিজ্ঞান ও যুক্তিবাদী সমিতি’ (‘যুক্তিবাদী সমিতি’ নামেই বেশি পরিচিত) সমাজ সচেতন যুক্তিবাদী আন্দোলন গড়ায় ব্রতী একটি স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠান। আমাদের কাছে বিজ্ঞান আন্দোলনের অর্থ এই নয়—“বিজ্ঞানের সবচেয়ে

অলৌকিক নয়, লৌকিক (প্রথম খণ্ড)২