পাতা:আখ্যানমঞ্জরী (প্রথম ভাগ) - ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর.pdf/২৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
অপত্যস্নেহ।
২১

উন্মত্তার ন্যায় হইল এবং সন্তানের স্নেহ ও মায়ার বশীভূত হইয়া, স্বীয় প্রাণবিনাশের শঙ্কা না করিয়া, অকুতোভয়ে, দ্রুত বেগে, অগ্নিরাশির মধ্যে প্রবেশ করিল।

 কিয়ৎক্ষণ পরে, সে, এক শিশু সন্তান ক্রোড়ে করিয়া পূর্ব্বস্থানে আগমন করিল। সন্তানের প্রাণ রক্ষা করিয়াছি, এই ভাবিয়া আহ্লাদে উন্মত্তপ্রায় হইল, এবং কিরূপে জ্বলন্ত অধিরোহণী দ্বারা আরোহণ করিল কিরূপে গৃহে প্রবেশপূর্ব্বক দোলা হইতে সন্তান লইয়া পুনরায় গৃহ হইতে নির্গত হইল, এই সমস্ত সন্নিহিত ব্যক্তিবর্গের নিকট বর্ণন করিতে লাগিল। কিয়ৎক্ষণ পরে, আহ্লাদভরে, শিশু সন্তানের মুখ চুম্বন করিতে গিয়া, দেখিতে পাইল, সে তাহার সন্তান নহে। তাহার পার্শ্ববর্ত্তী গৃহে অপর এক স্ত্রীলোক থাকিত, সে, আপন সন্তান পরিত্যাগ করিয়া, পলাইয়া আসিয়াছিল, এ তাহার সন্তান।

 যৎকালে সে, শিশু সন্তানকে আনিবার নিমিত্ত গমন করে, তখন অগ্নিশিখায় সমস্ত স্থান এরূপ আচ্ছন্ন হইয়াছিল যে, কিছুমাত্র দেখিতে পাওয়া যায় নাই, সুতরাং স্বীয় গৃহ ভ্রমে অপর গৃহে প্রবেশ করিয়াছিল, এক্ষণে আপন ভ্রম বুঝিতে পারিয়া, শোকে নিতান্ত বিহ্বল হইয়া বিলাপ করিতে লাগিল। অপত্যস্নেহের এমনই মহিমা, সেই স্ত্রীলোক, কোনও মতে স্থির হইতে না পারিয়া, শোকসংবরণ করিয়া, পুনরায় সেই শিশু সন্তানের আনয়ন নিমিত্ত, জ্বলন্ত গৃহের অভিমুখে ধাবমান হইল। সে, গৃহের সম্মুখবর্ত্তিনী হইবামাত্র,