পাতা:আখ্যানমঞ্জরী (প্রথম ভাগ) - ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর.pdf/৪৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৩৬
আখ্যানমঞ্জরী।

বলিয়া কেহই সাহস করিয়া তাঁহাকে আশ্রয় দিল না। সুতরাং, তিনি অত্যন্ত বিপদে পড়িলেন। বিশেষতঃ, সেখানে বন্য জন্তুর অত্যন্ত উপদ্রব, অনাবৃত স্থানে থাকিলে, প্রাণনাশের সম্পূর্ণ সম্ভাবনা। অতএব, কি উপায়ে নিরাপদে রাত্রি যাপন করিতে পারি, তিনি এই চিন্তা করিতে লাগিলেন।

 অবশেষে, তিনি, অন্য কোনও উপায় দেখিতে না পাইয়া, এক বৃক্ষের স্কন্ধদেশে অশ্ব বন্ধন করিলেন। পরে, বৃক্ষের উপরিভাগে বসিয়া রজনী যাপন করিব তাহা হইলে, বন্য জন্তুতে আক্রমণ করিতে পারিবে না, এই স্থির করিয়া, ঐ বৃক্ষে আরোহণ করিবার উপক্রম করিতেছেন, এমন সময়ে এক বৃদ্ধা কাফরি সেই স্থানে উপস্থিত হইল। সে, তাঁহার আকার প্রকার দেখিয়া, স্পষ্ট বুঝিতে পারিল, ইনি বিদেশীয় লোক, আশ্রয় না পাইয়া, ব্যাকুল ও চিন্তান্বিত হইয়াছেন। তখন, সে তাঁহাকে তাহার অনুগামী হইতে সঙ্কেত করিল। তদনুসারে, তিনি তাহার সমভিব্যাহারে চলিলেন।

 বৃদ্ধা, আপন আবাসে উপস্থিত হইয়া, কুটীরের এক অংশে তাঁহাকে থাকিতে দিল। তাহার কন্যারা গৃহকর্ম্মে ব্যাপৃতা ছিল, সে তাহাদিগকে অগ্রে অতিথিসেবার আয়োজন করিতে কহিল। তাহারা, অবিলম্বে এক বৃহৎ মৎস্য সংগ্রহ করিয়া, তাঁহার নিমিত্ত আহার প্রস্তুত করিল, এবং পর্য্যাপ্ত আহার করাইয়া, মাদুর পাতিয়া, তাঁহাকে শয়ন করাইল। এইরূপে অতিথিপরিচর্য্যা সমাপ্ত হইলে, তাহারা পুনরায় গৃহকর্ম্মে নিযুক্ত হইল, এবং অনেক রাত্রি পর্য্যন্ত কর্ম্ম করিতে লাগিল।