পাতা:আত্মকথা - সত্যেন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১২১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

অবিনশ্বর। এ সুখের হ্রাস নাই। এ সুখে তরঙ্গ নাই। এ সুখের বিনাশ নাই । আমি হাসি, কঁাদি, দুঃখ পাই ;-কিন্তু সবই আমার সেই নিত্য নির্কিবকার সুখ্যরূপ জমির উপর করি। যেমন এক যন্ত্ররূপ। জমির উপর নানাবিধ ফুল প্রভৃত্তি তোলা হয়, তেমনি আমার এই অনন্ত সুখ্যরূপ। জমির উপর হাসি কান্না সবই ফোটে। তাই ত মনে হয়, সচিদানন্দের বুঝি এই প্রকৃতির আনন্দ, ধর্ম্মজ্ঞান অক্ষুন্ন রাখিয়া এবং যতদূর সাধ্য প্রবল রাখিয়া কঠিন চাকরী করিয়া আমি অক্ষয় ও অনন্ত সুখের অধিকাৰী হইয়াছি। কিন্তু দু’দিনের জন্য স্বাধীনতা ফলাইতে গিয়া যে আত্মমানি সঞ্চয় করিয়াছিলাম, তাহা এখনও যায় নাই ; বোধ হয়, এ জীবন থাকিতে যাইবে না । কেবল চাকরীর এই সুখে উহা কতকটা চাপা পড়িয়াছে। কিন্তু কঠিন দায়িত্বপূর্ণ চাকরী করিয়া এই যে চিরস্থায়ী আনন্দ লাভ করিয়াছি, ইহার অপেক্ষাও একটা বড় ফলপ্রাপ্ত হইয়াছি। সে ফলের নাম discipline-নিয়মানুবর্ত্তিতা । এই কঠিন চাকরী করিতে করিতে যেন স্থৈর্য্য আসিয়াছিল, কষ্টসহিষ্ণুতা আসিয়াছিল, তেমনি আলস্য, অস্থিরতা, শ্রমকাতরতা, চঞ্চলত প্রভৃতি দোষ কাটিয়া গিয়াছিল । সংসারা-যাত্রায় ঐ সকল গুণও যেমন আবশ্যক, ঐ সকল দোয্যের পরিহারও তেমনি প্রয়োজনীয়। নাহিলে সংসারা-যাত্রায় বিপদ বিভ্রাট অশাস্তি অমঙ্গলের সীমা থাকে না। অর্থাৎ কঠিন চাকরী কঠোরভাবে সম্পন্ন করিলে, মনুম্বোচিত গুণ আপনা-আপনিই জন্মিয়া থাকে । অর্থাৎ, অপক মানুষ পরিপক্ক হয়। অপর দিকে পবিপক্ষ মানুষ স্বাধীনতা ফলাইতে গেলে উচ্ছঙ্খল হইয়া পড়ে। কঠিন চাকরীতে মানুষ গড়ে, স্বাধীন ব্যবসায় মানুষকে নষ্ট করে। এমন কঠিন কাজ যে সুসম্পন্ন করিতে পারিয়াছিলাম তাহার প্রধান কারণ এই যে, আমার সহকারীরা, নারায়ণ চন্দ্র, রাজেন্দ্র চন্দ্র, বিধুভুষণ, মন্মথ নাথ, জ্ঞানেন্দ্রলাল, প্রবোধপ্রকাশ সকলেই ভক্তের ন্যায় প্রাণপণে আমার সহকারিতা করিয়াছিলেন। প্রবোধ প্রকাশ অল্প বয়সে আমাদিগকে কাদাইয়া চলিয়া গিয়াছেন। ভগবান অপর সকলের মঙ্গলু করুন । এই স্থানে আর একটী কথা বলা আবশ্যক। আমার সহকারীদের ছুটী লওয়া আবশ্যক হইলে তাহদের পরিবর্তে কার্য্য করিবার নিমিত্ত আমি ইংরাজী সাহিত্য ও দর্শনের প্রথম শ্রেণীর এম, এ উপাধিধাৰী নিযুক্ত করিয়া দেখিয়াছি, তাহারা বাঙ্গালা হইতে ইংরাজী করিতে এবং ইংরাজী হইতে বাঙ্গালা করিতে সমান অপটু। ১৭ বৎসর অনুবাদকের কর্ম্মে থাকিয়া অস্থায়ীরূপে নিযুক্ত কেবল তিনটী ছেলেকে ভাল ইংরাজী লিখিতে দেখিয়াছিলাম-(১) আমার শ্রদ্ধাস্পদ বন্ধু ক্ষেত্রমোহন সেনগুপ্তের পুত্র প্রবোধপ্রকাশ সেনগুপ্ত (২) প্রখ্যাতনামা রাখাল দাস হালদার মহাশয়ের পুত্র হুকুমার হালদার এবং আমার সহপাঠী ৬/উমাকান্ত চট্টোপাধ্যাঙ্গের