পাতা:আত্মকথা - সত্যেন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৬৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

রচনার ভঙ্গি শিক্ষা করিলাম, অন্য দিকে গুপ্তের সেই সরল চটুল চকচকে পন্থের ভাষাও শিক্ষা করিতে চেষ্টা করিতে লাগিলাম। তখন প্রভাকরের প্রভূত পসার। লোকে কথায় কথায় প্রভাকরের পছন্ত আওড়াইয়া কোন বিষয়ের মীমাংসা করে, তামাসা করিতে হইলে প্রভাকরের ভাষায় বলে,-“এই গৌরব এই আদৱ দেখিয়া বালক হৃদয়ে একরূপ বুঝিয়েছিলাম, যে সহজ সরল বাঙ্গালা একটা ফেলনা জিনিষ নয় । অক্ষয় কুমার হইতে একদিকে যেরূপ মুখস্ত কবিয়ছিলাম-“ঘন বিজন কানন বা তরুশূন্য মরুদেশ, গভীর সিন্ধুগর্ভ বা জনাকীর্ণ রাজধানী, প্রখর রশ্মিপ্রদীপ্ত মধ্যাহ্ন সময় বা ঘোর দ্বিপ্রহরা তামসী বিভােবরী, তরুণ যৌবন বা পরিপক্ক প্রবীণকাল, সুশীতলসমীরসঞ্চালিত প্রভাত সময় বা বিহঙ্গকোলাহল কলিত শ্রাস্তিােহর সায়ংকাল, সর্বস্থানে, সৰ্বকালে, সর্বাবস্থায় পরাৎপর পরমেশ্বরকে সাক্ষী স্বরূপ দেখিয়া, ভক্তিমানের চিত্ত ভক্তিভরে দ্রবীভূত হয়। অন্য দিকে সেইরূপ,- “কে বলে ঈশ্বর গুপ্ত ব্যাপ্ত চরাচর । যাহারা প্রভায় প্রভা পায় প্রভাকর । ইত্যাদি এবং “বিবিজান চলে জানি লবেজান করে” ইত্যাদি মূখন্ত করিয়াছিলাম । তাহার ফল। এই হইয়াছে, সহজ বাঙ্গাল আমি এখনও ফেলনা জিনিষ মনে করি না । যে সাহায্যপ্রাপ্ত সংবাদপত্রের কথা বলিতেছিলাম তাহা এডুকেশন গেজেট ও সাপ্তাহিক বার্ত্তাবহ । এখনও সেই সাহায্য চলিতেছে, কিন্তু সে আকার নাই, সে প্রকার নাই। এখনকার দিনের মত নয়, অপেক্ষাকৃত বৃহৎ অক্ষয়ে ছাপা প্রথম খণ্ড প্রথম সংখ্যা এডুকেশন গেজেট প্রকাশিত হইল, আমার বেশ মনে পড়িতেছে। ওব্রাইনন স্মিথ স্বত্বাধিকারী ও সম্পাদক, কালিদাস মৈত্র সহ-সম্পাদক। তঁহার দুই তিনজন আত্মীয় উলায় থাকিতেন, তাহারা হর্ষে গৌরবে, তাহা পাঠ করিতে লাগিলেন,—সকলে একটু ঠাণ্ড হইলে আমি চুপি চুপি তাহা হইতে যাদব-মাধবের কথোপকথন পাঠ করিতে লাগিলাম। গেজেট কথাটা আমি তৎপূর্বে শুনিয়াছিলাম। বাঙ্গালা গেজেট দেখিয়াও ছিলাম। এডুকেশন কথাটা তৎপূর্বে আমার কাণে উঠে নাই। বাবাকে জিজ্ঞাসা করিলাম, “এই কথাটা কি ?” বাবা বলিলেন, “ওটা ইংরাজি কথা-অর্থ ‘শিক্ষা’। আমি বলিলাম “তবে শিক্ষা গেজেট বলিল না। কেন ?” পিতা একটু হাস্যা করিলেন। বোধ হয়। শৈশবে আমার সমালোচনার প্রবৃত্তি দেখিয়া, তিনি হয়ত একটু আহ্ননাদিত অথচ বিচলিত হইতেছিলেন। আমি পঞ্চাশ বৎসর কথাটা শুনিতেছি, কিন্তু শিক্ষা-বিভাগের মুখপত্রের নাম এডুকেশন গেজেট এ বিড়ম্বন কণ্টক এখনও প্রাণে খচ করিয়া উঠে । RR