পাতা:আত্মচরিত (৩য় সংস্করণ) - শিবনাথ শাস্ত্রী.pdf/১৩৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শিবনাথ শাস্ত্রীর আত্মচারিত [ ৪র্থ পরিঃ . . . “চলুন, বাড়ীতে গিয়ে মার সামনে কথা হবে। আমার বক্তব্য যা, তা আমি বললাম ; তার পর করা না করা আপনার হাত।” তার পর দুজনে বাড়ীতে যাওয়া গেলাল আমি গিয়া মাকে বলিলাম, “মা, এ কি হচ্ছে ? আমার স্ত্রী ও শ্বশুর বাড়ীর লোকেদের উপর রাগ ক’রে এ কি করা হচ্ছে ?” মা বলিলেন, “জনিস ত, আমার কঁাধের উপর একটা বৈ মাথা নাই ; আমি বাধা দিয়ে রাখতে পারব না ; যা ‘’ জানে করুক।” বাবা আমাদের আপত্তির প্রতি দৃকপাতও করিলেন না। আমাকে ধরিয়া বিবাহ দিতে লইয়া গেলেন। এই দ্বিতীয় বিবাহ বদ্ধমান জেলার দেপুর নামক গ্রামের অভয়াচরণ চক্রবর্ত্তীর জ্যেষ্ঠা কন্যা বিরাজমোহিনীর সহিত হইল। বিবাহটি ১৮৬৫ কি ? ১৮৬৬ কোন সালে হইয়াছিল, ঠিক মনে নাই। - দারুণ অনুতাপ ও ঈশ্বরের শরণাপন্ন হওয়া —এই বিবাহের । পরেই আমার মনে দারুণ অনুতাপ উপস্থিত হইল। একটি নিরপরাধ * স্ত্রীলোককে অন্যায় রূপে গুরুতর সাজা দেওয়া হইল, এবং আমি অনিচ্ছা সত্ত্বেও সেই অন্যায় কার্য্যের প্রধান পুরুষ হইলাম, ইহা ভাবিয়া লজ্জা ও দুঃখে অভিভূত হইয়া পড়িলাম। পিতার আদেশে বিবাহ করিতে যাইবার পূর্বে আমি এই ভাবিয়া মনকে প্রস্তুত করিয়াছিলাম যে, রামচন্দ্র পিতৃ-আজ্ঞা পালনার্থ চতুৰ্দশ বর্ষ বনবাস • করিয়া কষ্ট পাইয়াছিলেন, আমি না হয় পিতৃ-আজ্ঞা পালন করিয়া চিরকাল কষ্ট পাইব। কিন্তু এই অনুতাপের মুহুর্ত্তে সে চিন্তা আর আমাকে বল দিতে পারিল না। আমি মনে করিতে লাগিলাম, মানুষ আপনার কাজের জন্য আপনিই দায়ী, হাজার গুরুর আদেশ হইলেও পাপের অংশ কেহ লয় না। আত্মনিন্দাতে আমার মন অধীর হইয়া উঠিল। সে তীব্র আত্মনিন্দার কথা মনে হইলেও এখন শরীর কম্পিত হয়। আমি আমুদে উপহাস-রসিক বন্ধুতাপ্রিয় মানুষ ছিলাম,