পাতা:আত্মচরিত (৩য় সংস্করণ) - শিবনাথ শাস্ত্রী.pdf/১৪৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

১৮৬২-৬৭ ] জগৎ বাবুর শ্যালকপুত্রী ; বাল্য বিবাহের প্রতি ঘৃণা ১১৫ জগৎ বাবুর শ্যালকপুত্রী। বাল্য বিবাহের প্রতি ঘূণা।— আমরা এই বাড়ীতে আসার পর মাসীর এক ভ্রাতুষ্পপুত্রী, ১৫/১৬ বৎসরের বালিকা, তাহদের নিকট আসিয়া প্রতিষ্ঠিত হইল। সে ২১ দিনের মধ্যেই আমাকে ‘দাদা” করিয়া লইল । পিতা মাতা ঐ বালিকাটিকে শৈশবে এক জন পরিণতবয়স্ক বিপত্নীক ব্যক্তির সহিত বিবাহ দিয়াছিলেন। বালিকাটি বোধ হয় পতির নিকট বা পতি গৃহে ভাল ব্যবহার পাইত না ; কারণ, শ্বশুর বাড়ীর কথা তুলিলেই দর দর ধারে তাহার দুই চক্ষে জলধারা বহিত ; এবং তাহ দেখিয়া বাল্য বিবাহের প্রতি আমার ঘুণা বাড়িয়া মাইত। আমি সাবধান হইয়া বালিকাটির নিকট তাহার শ্বশুর বাড়ীর কণা তুলিতাম না, তাকে পড়াশোনায় গল্প গাছায় ভুলাইয়া রাখিতাম । বালিকাটি প্রাতে গৃহ কর্ম্মে পিসীর সহায়তা করিত ; আমার নিকট আসিতে পারিত না ; কিন্তু বৈকালে আমি ও মহিম কলেজ হইতে আসিলেই সে আমাদের গৃহ আশ্রয় করিত। আমি তাহাকে ও মহিমকে পড়াইতাম, লিখিতে শিখাইতাম ; ভাল ভাল গল্প শুনাইতাম ; আমার সেই পূর্ব্ব কালের উন্মাদিনীর অভাব যেন কিয়ৎ পরিমাণে পূর্ণ হইত। অনেক দিন এরূপ হইত যে, আমি পড়িতে বসিতাম, সে ও মহিম ঘুমাইয়া পড়িত। আমি শয়নের পূর্ব্বে তাহাকে তুলিয়া বাড়ীর ভিতর দিয়া আসিতাম। আমি এইখানে থাকিতে থাকিতে আমার বন্ধু যোগেন্দ্র ( যিনি পরে যোগেন্দ্র বিদ্যাভূষণ নামে প্রসিদ্ধ হইয়াছিলেন ) বিধবা বিবাহ করেন এবং আমি হঁহাদিগকে পরিত্যাগ করিয়া যোগেন্দ্রের সঙ্গে থাকিবার জন্য যাই । কিরূপে সে বিবাহ ঘটে, পরবর্তী পরিচ্ছেদে তাহা বলিতেছি। যাইবার সময় মাসীকে বিশেষতঃ সেই বালিকাটিকে ছাড়িয়া যাইতে বড় ক্লেশ৷ তইয়াছিল ; সে জন্য সে বিচ্ছেদটা মনে আছে। সে যেন আমার স্নেহ পাইয়া প্রাণ দিয়া আমাকে আঁকড়াইয়া ধরিয়াছিল, সেই স্নেহ পাশ ছিড়িয়া যাওয়া আমার পক্ষে ক্লেশকরা হইয়াছিল। আমি যখন