পাতা:আফগানিস্থান ভ্রমণ.djvu/৫৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৪৮
আফগানিস্থান ভ্রমণ

মাইল যাবার পরই সেদিনের মত বিশ্রাম নিতে বাধ্য হতে হ’ত। বিশ্রাম করতাম পথের পাশেই। এতে আরাম বেশ হত। রুটি আমার কাছে মজুত থাকত। পথের পাশে ছোট ছোট ঝরনার জল খেয়ে তৃপ্ত হতাম। কোনরূপ দ্বিধা না করে পথের পাশেই শুয়ে থাকতাম। এরূপ ভাবে কয়েক দিন চলার পর শরীর দুর্বল হয়ে পড়ল। শরীর দুর্বল হলে মনেও আপনা হতেই ভয়-ভাবনা দেখা দেয়। মন যখন ভয়ে জড়সড় তখন পথিক নানারূপ বিভীষিকা দেখে। সেই বিভীষিকাই একদিন গাল গল্পে পরিণত হয়। আমি সেই বিভীষিকাজাত গল্প হতে রক্ষা পাবার জন্য আফগান জাতের ভালর দিকটাই ভাবতাম। সেজন্যই বোধ হয় আমার মুখ হতে জাতিবিদ্বেষের হলাহল বের হতে পারে নি।

  লোকমুখে শুনলাম, অতি কাছেই একটি গ্রাম আছে। প্রতিজ্ঞা করলাম যতদিন শরীর সবল না হয় ততদিন গ্রাম ত্যাগ করে ফের পথে বের হব না। কিন্তু কোথায় গ্রাম, কতদূরে কে জানে? কতদূরে গ্রাম মানচিত্র দেখেও বুঝবার জো নেই। লোকের কথায় যা’ শুনি তাতেও আশ্বস্ত হতে পারি না। ‘‘চান্দ মাইল আস্ত” কথাটা বাজে কথাই মনে হতে লাগল। চান্দ মাইল আস্ত-এর অর্থ করে নিলাম গ্রামে পৌঁছতে আরও কয়েক মাইল মাত্র বাকি। কিন্তু সকাল বেলাও শুনলাম চান্দ মাইল, বিকালেও তাই—রাত্রি এক প্রহরের পরও সেই একই কথা-চান্দ মাইল আস্ত। ক্রমে এদের কথার উপর অনাস্থ হল, আর পথের সংবাদ কারো কাছ হতে না নিয়ে পথের পাশেই শুয়ে রাত কাটাতে হল।

  তন্দ্রা অবস্থায় কারো নাক ডাকতে কখনও শুনি নি। আমি তখনও গভীর নিদ্রায় অভিভূত হই নি, অথচ আমার নাক ডাকছিল। নিজের নাসিকাগর্জন নিজেই শুনছিলাম এবং দৃঢ়সংকল্প করেছিলাম, ঘুম ভাংগলে সর্বপ্রথম কাজ হবে, নোট বইএ এই কথাগুলি লিখে রাখা। লিখেছিলাম বলেই এখানে পুনরাবৃত্তি করতে পারছি।