পাতা:আমার আত্মকথা - বারীন্দ্রকুমার ঘোষ.pdf/১১৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
আমার আত্মকথা

ভেবে তিনি হয়ে পড়তেন যেন একেবারে স্নেহকাতর ভীত পিসীমাটি।

 অকল্যাণ, অপযশ, বিপদ আপদের একটা দুর্দ্দমনীয় টান আছে; কাজেই পরের ভাগ্যে সে রকম একটা কিছু ঘটলে পাড়াপড়শীর পক্ষে তা’ হয় একটা চাপা আনন্দের ঘটনা। পরম আত্মীয়ের জীবনে ঘটলেও তা সুখদুঃখ মিশ্রিত একটা উৎকট টানের বস্তু হয়ে দাঁড়ায়। ‘আমার ছেলেটি যায় যায়’— একথা ভাবতে এবং তা’ ক্রমাগত ভেবে ভেবে বিনিয়ে বিনিয়ে কাঁদতে মা বাপের একটা তীব্র অস্বাভাবিক সুখ হয়; এমনি করে দুঃখকেও মানুষ অহরহ ভোগ করছে; এই জন্যে ট্রাজেডিই মানুষের জীবনের সব চেয়ে রসঘন বস্তু, ট্রাজেডি না হলে নাটক জমে না, ট্রাজেডি বিনা ফিল্মকে দিয়ে শ্রোতাকে thrill দেওয়া শক্ত হয়, কারণ হাসি ও কান্না একই স্নায়বিক উত্তেজনার দু’টো এবং কান্নাটাই তার মধ্যে সব চেয়ে স্নায়ু-সুখকর ও উত্তেজক ব্যাপার। ‘পাতালপুরের দুয়ার’ গল্পে এই দুঃখের অকল্যাণের ডাক যে কত সম্মোহন তা’ কতকটা দেখিয়েছি।

 দরবারী কাহার ছিল দেওঘরে পুরন্দাহায় পাল্কীবেহারাদের চাঁই, সে ও তার ভাই বনোয়ারী ও আস্রফিয়া আমাদের বাড়ী মাঝে মাঝে চাকরী করতো। মাকে একবার নন্দন পাহাড় দেখাতে নিয়ে যাবার সময় এই দরবারীদের পাল্কী ভাড়া করা হয়, তাদেরই মুখে দিদিমারা মায়ের দেওঘর আসার খবরটা পান। আমার নিজের গর্ভধারিণী মা থাকতেন রোহিণীতে একা,

১১০