পাতা:আমার আত্মকথা - বারীন্দ্রকুমার ঘোষ.pdf/১৪৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
আমার আত্মকথা

 নীড় বাঁধার সব অক্লান্ত আয়োজন ফুরোতে না ফুরোতেই কিন্তু ঝড় ওঠে, সঙ্গিনী মাথায় আঘাত পেয়ে চোখের সামনেই রক্তমাখা পাখা মেলে লুটিয়ে পড়ে আর আকাশ ফাটিয়ে ডাকতে ডাকতে এক দিকে উড়ে যাওয়া ছাড়া সাথীহীন পাখীর আর গতি থাকে না। তবু কিন্তু তবু ঐ ক্ষণিক সুখ-নিবিড় আয়োজন টুকুর জন্যে শুধু কিই বা না দেওয়া যায়! মেজদা’র নিরিবিলি বাড়ীতে আমার পড়ার ঘরটি ছিল বড়ই শান্তরসের জায়গা। এক পাশে কবিতা ও নভেলে ভরা, খাতা পেন্সিল কলমে এলোমেলো অগোছাল টেবিল, তারই ওপাশে ক্যাম্প খাটখানা—যার ওপর বিছনা দিন রাত পাতাই থাকতো। ঘরটির সামনে ঘাসে সবুজ একটি ছোট্ট মাঠ, তার পরই বাড়ীর কম্পাউণ্ডের গেট। আমার মেজবৌদির শ্রীহস্তটির স্পর্শে গোছাল এই ছোট সংসারে কোথায়ও এতটুকু অশান্তির ছায়াও ছিল না। আমার কবিতা রসাস্বাদনের তিনি ছিলেন মুগ্ধ মূক শ্রোতা; মনে আছে এই সময়ে রবীন্দ্রনাথ, মানকুমারী, প্রিয়ম্বদা, দেবেন্দ্রনাথ আদি কবির অনুমতি নিয়ে আমি আর বউদি’ একটি কবিতা সংগ্রহ ছাপাবার আয়োজন প্রায় সম্পূর্ণ করে তুলেছিলুম। তারপর কেন যে তা’ ছাপানো হ’লো না তা এখন আর মনে নেই, বোধ হয় টাকার অভাবেই হবে।

 কৃষির স্বপ্ন এই সময়ে আমায় পেয়ে বসেছিল। জীবনের সব চেয়ে বড় স্বপ্ন ছিল—বাঙলার কোন্ নিরালা বনহরিত কোণে আমার হবে বেড়ায় ঘেরা, লাউলতায় কলার ঝোপে ঢাকা

১৩৫