পাতা:আমার আত্মকথা - বারীন্দ্রকুমার ঘোষ.pdf/১৫৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
আমার আত্মকথা

করে আমাকে বসিয়ে দাদাকে খবর দিত। অথচ সমস্ত পথটাই গেছি হেঁটে বা ট্রামে হটর হটর করে, ফিটনের ভাড়া দিয়েছি চার আনা। তারপরে হেঁটে গিয়ে দেখেছি দাদার নিজের চাকর ছাড়া আর কেউ ছুটেও আসে না, খাতিরও করে না। বড় লোকের বাড়ীর এই কায়দায় ওরা কখন কখন খুবই বেকায়দায় পড়তে পারে কারণ রোণাল্ডশের মত লাট সাহেবও তো একদিন পদব্রজে এসে দেখা দিতে পারেন। মহাত্মাজী এলে বোধ হয় হাজার করা নয়শ নিরানব্বইটা বড়লোকের বাড়ীতে গলাধাক্কা খান যদি সঙ্গে হোমরা চোমরা লেজুড়গুলি না চলে। তবে সৌভাগ্য ক্রমে মহাত্মাজীর মুখটা সবারই চেনা, এই যা রক্ষে।

 আমাদের দেশের সভ্যতায় এ কৃত্রিম বড়মানুষীর জিনিসটা কিছু এমন কদর্য্য ভাবে ছিল না, কারণ এদেশে চির দিনই রাজরাজড়ার ঘরে পূজা পেয়ে এসেছে সাধু; ল্যাঙটা ফকির ও সাদাসিধে পণ্ডিত, কবি ও চিত্রকর। পূর্ব্ব যুগে অষ্ট অলঙ্কারে ছত্র চামরে সেজে দরবারে বসার সময় পর্য্যন্ত রাজাও থাকতেন প্রায় ঐ মহাত্মাজীরই মত বেশে। অন্ততঃ অজন্তা ইলোরার পাথরে কাটা মূর্ত্তিগুলিতে ঐ রকমই স্নিগ্ধ শুচি একটি নিরাভরণ সৌম্য বেশের পারিপাট্যই দেখতে পাই। কৃত্রিম বিশাস আরম্ভ হ’লো মোগলাই আমল থেকে, তবু তারও মধ্যে ছিল একটা চারু শিল্পের ললিতস্পর্শ ও মানুষের গরিমার ছবি। প্রফুল্লের রাণী গিরির ঠাটের মত তা’তে মন প্রাণ হৃদয় শক্তির

১৪৮