পাতা:আমার আত্মকথা - বারীন্দ্রকুমার ঘোষ.pdf/১৯৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
আমার আত্মকথা

যতীনদার সঙ্গে গৃহ বিবাদে আমাদের কেন্দ্রটী ভেঙে যাওয়ায় আবার সেই বরোদায় আমি সেজদা’র সঙ্গে ফিরে যাই। সেখানে আবার কিছু কালের জন্যে আরম্ভ হ’লো সেই শান্ত সুখ-নিবিড় নিরালা জীবন, সেই শিকার, কবিতা চর্চ্চা ও সব্জীবাগ। তখন আমি বোধ হয় ‘মিলনের পথে’ লিখছি। আবার আমাদের প্লাঞ্চেট নিয়ে ভূতের রিসার্চ্চ আরম্ভ হলো। এবার কে একজন অনৈসর্গিক জীব রামমোহন না বিবেকানন্দ অমনি একজনের নামে এসে আমাদের ক্রমাগত উত্তেজিত করতে লাগলো দুর্গম বনে পর্ব্বতে ‘ভবানী মন্দির’ গড়বার জন্য। এই মন্দিরে দীক্ষাপ্রাপ্ত সমর্পিতপ্রাণ কর্ম্মী সব বাঙলা দেশে গড়বে অনুপম এক মুক্তির পীঠস্থান।

 আমার প্রাণ ও হৃদয় সত্তার মাঝে আছে কে এক কবি, অতি বালক কাল থেকে যার খেলাই নানা ঘোরাল রসাল স্বপ্ন নিয়ে। খুব ছোট বেলা ১৪।১৫ বছর বয়সেও আমার মনে আছে প্রাণের মাঝে জাগতো একটা প্রবল বেগ, একটা আকুল উর্দ্ধ দৃষ্টি, বড় কিছু হবার অদম্য স্পৃহা। দিন যেন আমার বৃথা বয়ে যাচ্ছে, কি যেন একটা বৃহৎ ও সার্থক আয়োজন করতে হবে, এক দিনের বা পাঁচ দিনের বিলম্বে যার বিমল শুভ্র সৌধ নীল আকাশ ছুঁয়ে বুঝি আর উঠবে না। এই চঞ্চল উচ্চাকাঙ্ক্ষার বেগে আমি আমার চার পাশের মানুষকে চিরদিন তাড়িয়ে নিয়ে বেড়িয়েছি; আমি চলেছি আপন স্বপ্নে নিজের বেগে আর তারা আমাকে ঘিরে জটলা করে চলেছে আমার তাড়ায়। তাদের মধ্যে হয়তে।

১৮৬