পাতা:আমার আত্মকথা - বারীন্দ্রকুমার ঘোষ.pdf/২১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
আমার আত্মকথা

সঙ্গিনীটিকে দিলে ক্ষেপিয়ে। প্রেমের একটা অকূল সাগর বুকে করে যে মানুষ মমতাময় প্রাণ নিয়ে জগতে এসেছে, তার একমাত্র ভালবাসার বস্তুকে কেড়ে নিলে সে যদি পথভ্রষ্ট হয় তা’ হ’লে তার দোষ দেওয়া চলে কি? সে ক্ষেত্রে অতখানি প্রেমের অতখানি উচ্ছল প্রাণণক্তি উন্মার্গগামী হওয়াই তো স্বাভাবিক। নীতিবাগীশ হচ্ছে পেচক জাতীয় জীব, সত্যের দিক্‌প্রকাশী আলোয়—দিনের বেলা সে কাণা, নীতির আধ আলো আধ-আঁধার রাত্রে তার চোখ ফোটে ভাল; তখন সে জগতের কল্যাণ খুঁজে খুঁজে ঘুরে বেড়ায় আর কর্ক্কশ বীভৎ ডাক ডাকে। মানুষের মন প্রাণ হৃদয় ও দেহ যে কি জটিল জিনিস, কি পর্য্যন্ত সূক্ষ্ম ও সুকুমার যন্ত্র তা’ নীতিবাগীশ ধরতে পারে না। কোথায় কতটুকু আঘাতে সে যন্ত্র বিকল হয় তা সে বুঝবে কি করে?

 মায়ের মত উদ্দাম পাগলের সঙ্গে সারা জীবন ঘর করা খুব ধৈর্য্যের ও সহিষ্ণুতার কথা, বাবা তা’ চেষ্টা করেও পারেন নি। তবু সে চেষ্টা কম দিন তিনি করেন নি, মার পাগল হতে আরম্ভ হবার পরও তাঁদের চার ছেলে ও এক মেয়ে হয়েছিল। বোধ হয় আমার জন্মের পর বিলাত থেকে ফিরেই দু’জনে পৃথক হন, মা এসে রোহিণীতে বাস করেন। মাকে বাবা মাসে মাসে আর্থিক সাহায্য করতেন, খুব সম্ভব সে সাহায্যের পরিমাণ ও তাঁর আসা যাওয়া ক্রমশঃ কমে এসেছিল, কারণ রেল লাইনের ধারের সেই সাহেবী বাড়ীর মত খানসামা, বাবুর্চ্চি, আয়া ও আড়ম্বর আর তারিণীবাবুর বাড়ীতে ছিল না। একটা চাকর

১৭