পাতা:আমার আত্মকথা - বারীন্দ্রকুমার ঘোষ.pdf/২৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
আমার আত্মকথা

 দিদিকে যে কে কোথায় নিয়ে গেল যাদুমন্ত্রে উড়িয়ে তা’ ভাল করে বুঝলাম না, শুধু একলা পড়ে রইলাম সেই নির্ব্বান্ধব পুরীতে দুর্দ্দান্ত মাকে আশ্রয় করে। ছোট ছেলে মেয়ের জীবনের মত নিরুপায় অসামর্থ্যের এমন করুণ চিত্র আর আছে কি? ভাগ্যক্রমে প্রকৃতি মানুষের হৃদয়ে বাংলা প্রেমের এত খানি বেগ দিয়েছিল, নইপে জগতের এত কোটি কোটি শিশুর ভাগ্যে কি শোচনীয় পরিণাম যে ঘটতো।

 এর দু’ বছর পরে আবার পালে বাঘ দেখা দিল আমায় ছোঁ মেরে নেবার জন্যে। তখন আমার দশ বছর বয়স, জীর্ণ শীর্ণ চেহারা, অক্ষর পরিচয় অবধি হয় নি। বাহিরের জগতের সম্বন্ধে একেবারে অজ্ঞ আমাকে হঠাৎ মুখে করে কোন্ এক গড়ুর পক্ষী তুলে এনে ফেলে দিল আলাদিনের যাদুর মায়াপুরীতে। শুনেছি রিপ ভ্যান্‌ উইঙ্কল নাকি একটানা বিশ বছর ঘুমিয়েছিল, সেই কাল ঘুম থেকে জেগে সে দেখে তার চোখের সামনে এক অদ্ভুত অচেনা জগৎ। সব বদলে গেছে, তার জাগ্রত কালের সে সব মানুষ, সে রাজা প্রজা, সে নগর পল্লী কিছুই আর স্বস্থানে স্বমূর্ত্তিতে নেই। রিপ্ ভ্যান উইঙ্কলের বিস্ময় আমার সেই হঠাৎ দেখা অচিন্ত্যপূর্ব্ব অদৃষ্টপূর্ব্ব জগতের দর্শন জনিত বিশ্বয়ের চেয়ে অনেক কম। কোথায় বন-গাঁ রোহিণী, তার বুকে মায়ের কড়া শাসনের পাগলা গারদ, তারিণী বাবুর বাড়ীর কম্পাউণ্ড আর কোথায় আলো মানুষ যান বাহন রাস্তা ঘাট প্রাসাদ

২৩