পাতা:আমার জীবন.djvu/৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

গ্রন্থ পরিচয় গ্রন্থকত্রী মুখবন্ধে লিখিয়াছেন, “১২১৬ সালে চৈত্র মাসে আমার জন্ম হয়, আর এই ১৩r৩ সালে আমার বয়ঃক্রম ৮৮ বৎসর হইল।” এই জীবনথানি ব্যক্তিগত কথা বলিয়া উপেক্ষা করা চলে না । ইহা চিীন হিন্দু রমণীর একটি খাট নক্স । যিনি নিজের কথা সরল ভাবে কহিয়া থাকেন, তিনি অলক্ষিতভাবে সামাজিক চিত্র অঙ্কন করিয়া যান। “আমার জীবন” পুস্তকধানি শুধু রাসম্বন্দরীর কথা নহে, উহা সেকেলে হিন্দুরমণীগণের সকলের কথা ; এই চিত্রের মত যথাযথ ও অকপট মহিলা-চিত্র আমাদের বাঙ্গালী সাহিত্যে অরি নাই। এখন মনে হয়, এই পুস্তকখানি লিখিত না হইলে বাঙ্গালা সাহিত্যের একটি অধ্যায় অসম্পূর্ণ থাকিয়া যাইত। হিন্দু সমাজে পুরমহিলারা যেখানে অবস্থিত ছিলেন, এখন আর তিনি সেখানে নাই-এই হিসাবে এই চিত্রখানি অমূল্য। রাসমৃদর বার্তাহার মত আর কেহ জীবনের শেষ সীমান্তে দাড়াইয়া একথা না বলিয়া গেলে যাহা আর বলা হইত না । সেকেলের রমণীচরিত্র ভয়, লজ্জা ও গ্রাম্য সংস্কাবের মধ্যে কি ভাবে বিকাশ পাইত, তাহার এমন স্বম্পষ্ট ও জীবন্ত ছবি আমরা আর দেখি নাই। পল্পীরমণীর একহন্ত পরিমিত অবগুণ্ঠন কিরূপে প্রৌঢ়-বয়সে সমস্তের সিন্দুব স্পর্শ করিয়া তাহার অন্নপূর্ণ মূতি উন্মোচন করিয়া দেখাইত, কন্যা হইতে বধু, বধু হইতে গৃহিণী ও জননীরূপে তিনি কিরূপে বিকাশ পাইতেন তাহা এমন বিশ্বস্তসূত্রে আমাদের আর জানিবার উপায় ছিল না। সাধারণতঃ কবিগণ প্রেমকে কেন্দ্রবর্তী করিয়া রমণী চরিত্র আঁকিয়া থাকেন, কিন্তু হিন্দু গৃহ শুধু পতিপত্নীর নিজস্ব গৃহ নহে ; যিনি গৃহিণী, তিনি কন্য, ভগ্নী, ননী, পুত্রবধু, কী এই সর্বাবধরূপে স্বযশ অর্জন না করিতে পারিলে এই সমাজে তিনি প্রশংসা পাইতেন না, অথচ কবিগণ সচরাচর তাহাঁকে এই গণ্ডী হইতে পৃথক করিয়া প্রেমলীলার স্বাতন্ত্র কল্পনা করিয়া থাকেন, রমণীর সমগ্র চিত্রটি আমরা প্রায়ই কাব্য বা উপন্যাসে দেখিতে পাই না । স্বাভাবিক লজ্জাশীলতায় রাসম্বন্দরী এই প্রেমের অন্ধটিই স্বজীবন হইতে বাদ দিয়াছেন,—তাহার জীবনের অপরাপর দিক দ্বিগুণতর স্পষ্ট হইয়া উঠিয়াছে। কবি বা ঔপন্যাসিক যে স্থান হইতে বিদায় গ্রহণ করিয়া থাকেন, রাসমুন্দরী সেই স্থান হইতে কথা আরম্ভ করিয়াছেন ; কোন পুরুষ শত প্রতিভাবলেও রমণীদ্বয়ের গৃঢ় কথার এমন আভাস দিতে পারিতেন কিনা সন্দেহ ।