পাতা:আমি শুধু একা - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/১১২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

আটকাতে পারে নি, একটা দুর্বলতাই প্রকাশ পেয়েছে এই আসায়। নেমপ্লেটটা ঝুলছে। ওটা যেন অসিতবাবুর জীবনের মতই। কোন রকমে টিকে আছে মাত্র খসে যাওয়ার অপেক্ষায়! হয়তো অমৃতের বেলাতেও ওটা সত্যি। —--ই দেয়ার ? কড়া বেশ কিছুক্ষণ নাড়ার পর দরজাটা খুলে গেল। সামনেই অমৃত দেখছে অসিতবাবুকে। ঘুম বোধহয় ওঁর নেই-কমাসেই রংটা আরও কালো বিবর্ণ হয়ে গাল দুটাে তুবড়ে গেছে। চোখের তারার রং হলদে গোছের, ওই পোড়া চুরুট মুখে ঠিক ধরা আছে! আর শীর্ণ লম্বা শরীর ঢেকে ড্রেসিং গাউন রয়েছে, তার একটা হাত ছিড়ে ঝুলছে পাশে নববড় করে। অমৃতকে দেখছেন তিনি দরজাটা বন্ধ করে। ফ্যাসফেসে গলায় শুধোন। ---একদিন এসেছিলেন না ? রাত্রির বয় ফ্রেন্ড তুমি। এনাদার ওয়ান ? এ্যা; অমৃত জবাব দেয়- এমনি চেনা-জানা, এদিকে যাচ্ছিলাম। তাই। —-চেনা-জানা; বিড়বিড় করছেন অসিতবাবু। হঠাৎ অমৃতকে কঠিন কণ্ঠে বলে ওঠেন সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে। —হলপ পাঠ করেছো ? ষ্ট্যান্ড ইন এটেনশন। এজলাসে কথা বলার আগে হলপ পাঠ করতে হয় জানো না ? অমৃত থমকে দাঁড়ালো। অসিতবাবুর দু'চােখ ঝকঝকি করে ওঠে। শীর্ণ মানুষটার গলার শির ফুলে উঠেছে। হাত তুলে তিনি বেশ জোর গলায় বলে চলেছেন। —ইন দি নেম অব এমপারার অব ইন্ডিয়া—আই একিউজ দি—অব হঠাৎ ভদ্রলোক থেমে গেলেন করে চীৎকারে! --ড্যাডি! আবার শুরু করেছো ? লাইফ হেলা করে ছাড়বে। উঃ! অসিতবাবুর চীৎকারে ওপাশের ঘর থেকে বের হয়ে আসছে। রাত্রি। শাড়িটা কোনরকমে জড়ানো রয়েছে। মাথার এক-রাশ বব করা চুল কেশরের মত উস্কোখুস্কোভাবে ফুলে উঠেছে। চােখে-মুখে ক্লাস্তির গাঢ় ছায়া; চোখের পাতাগুলো ভারী ভারী হয়ে রয়েছে। ওরা ওই বে-আৰু দেহটার দিকে চেয়ে চোখ নামালো অমৃত। δ Σ. 8