পাতা:আমেরিকার নিগ্রো - রামনাথ বিশ্বাস.pdf/১৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

মনুষ্যত্ব লাভ আজও বেঁচে আছি। কিন্তু এই বাঁচার কি কোন অর্থ হয় ? ভাই বােনেরা সবাই মরেছে শুনে একটুও দুঃখ হয় না। ভালই হয়েছে, তারা যদি বেঁচে থাকত তাদের জীবন-যন্ত্রণা কতই কষ্টের হত! চিন্তা করতেও কষ্ট হয়। শরীরটা মােটেই ভাল নয়। কালও খাওয়া হয়নি, আজও কখন যে খাব কোন নিশ্চয়তা নেই, তবুও প্রভাতী সুর্যের আলাে বেশ লাগছিল। কাছেই পাহাড়ের উপর তামাক ক্ষেত। অফুরন্ত তামাক ফুল ফুটেছে। তামাক ফুলের গন্ধ নেই তবুও মৌমাছি পাশে পাশে উড়ছিল। তামাক পাত। পাহাড়িয়া বাতাসে একটু নড়ছে। প্রত্যেকটা পাতা আপন ভারে নুয়ে পড়ছে। তামাক ক্ষেতেও আমি কাজ করি। মজুরী দৈনিক ত্রিশ সেন্ট। পাঁচ সেন্ট করে একখানা রুটির দাম। দিন বেশ চলে যদি প্রত্যেক দিন কাজ থাকে। রুটির সঙ্গে সামান্য সবজি, এর বেশী আমরা আর কিছু চাই না। রুটির গন্ধ কি মধুর। বােধ হয় এর চেয়ে সুগন্ধ পৃথিবীতে আর কিছুতে নেই। আমাদের ফার্মের বেকার হল একজন ফরাসী। ব্যাটার লােলুপ দৃষ্টি আমার উপর। ভেবে পাইনা সে আমার কাছ থেকে কি চায়। দেখা হলেই রুটি দেয়। কি জানি মনটা কেঁপে ওঠে, রুটির কথা ভুলে যাই। | ক্ষুধায় অভ্যস্ত হয়েছি। রুটির কথা মনে হলে মুখ থেকে লালা বের হয় না, মুখটা শুকিয়ে যায়। রুটি চোখের সামনে ভেসে ওঠে। হা রুটি, রুটিই বােধ হয় নিগ্রোর জীবন। শ্বেতকায়রা রুটী খায় না, তারা খায় মাংস, মাছ, সবজি, ডিম, দুধ, মাখন, মধু আরও কত কি। এক টুকরা রুটি কাছে নেয়, খায় না। আমার জীবনটা যদি তাদের মত হত, তবে সে জীবন কত সুখের হত। .