পাতা:ইছামতী - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/১১৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

জন্যে দু’হাত বাড়াচ্চে। তিলু নিয়ে যাবার চেষ্টা করতে সে কাঁদতে লাগল ও ছোট্ট ডান হাতখানা বাড়িয়ে বাবাকে ডাকতে লাগলো।

 —দিয়ে যাও, দিয়ে যাও! দাঁড়াও, ঐ তো দীনু বুড়ি আসচে। দেখে নাও তো চালটা—। ভবানী ছেলেকে কোলে করলেন। খোকা আনন্দে তাঁর কান ধরে বলতে লাগল—ই—গুল্‌ল্‌ন—আঙুল দিয়ে পথের দিকে দেখিয়ে দিলে।

 ভবানী বললেন—না, এখন তোমার বেড়াবার সময় নয়। ওবেলা যাবো।

 খোকা ওসব কথা বোঝে না। সে আবার আঙুল দিয়ে পথের দিকে দেখিয়ে বল্‌লে—ইঃ।

 —না। এখন না।

 তিলু বললে—যাচ্চেন তো মামাশ্বশুরের ওখানে। নিয়ে যান না সঙ্গে। খোকা ততক্ষণে বাবার পৈতের গোছ ছোট্ট মুঠোতে ধরে পথের দিকে টানচে, আর চেঁচিয়ে বলচে—অয়াঃ—নোবল্‌ নোবল্‌—উঁ—

 পরেই কান্নার সুর।

 তিলু বললে—যাও, যাও। আহা, আপনার সঙ্গে বেড়াতে ভালোবাসে।

 —কেন, ওর তিন মা! আমি না হোলে চলে না?

 —না গো। রান্নাঘরে যখন থাকে, তখন থাকে থাকে কেবল আঙুল তুলে বাইরের দিকে দেখাচ্চে, মানে আপনার কাছে নিয়ে যেতে বলচে—

 এমন সময় দীনু বুড়ি চালের ধামা কাঁখে করে নিয়ে ওদের কাছাকাছি এসে পড়তেই ওরা বললে—দেখি কি চাল?

 দীনু বুড়ির বয়স আশীর ওপর, চেহারা ভারতচন্দ্র বর্ণিত জরতীবেশিনী অন্নদার মত। এমন কি হাতের ছোট্ট লড়িটি পর্যন্ত। ওদের কাছে এসে একগাল হেসে ধামা নামিয়ে বললে—ডবল নাগরা দিদিমণি। আর কে? জামাই?

 তিলু বললে—হ্যা ঁগো। দর কি?

 —ছ’পয়সা।

 —না, এক আনা করে হাটে দর গিয়েচে।

 —না দিদিমণি, তোমাদের খেয়ে মানুষ, তোমাদের ফাঁকি দেবানি? ছ’পয়সা

১১০