পাতা:ইছামতী - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/১৩৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

 বিলু ও নিলু স্বামীর দু’দিকে দুজন বসলো। বিলু বললে-পচা গরম পড়েছে আজ, গাছের পাতাটি নড়ছে না! জানেন, আমাদের দু’খানা কাঁটালই পেকে উঠেছে?

 পাকা কাঁটালের গন্ধ ভুর ভুর করছিল ঘরের গুমট বাতাসে। বিলুর খুশি সুরে ভবানীর বড় স্নেহ হোল ওর ওপরে। বললেন—দুটোই পেকেছে? রসা না খাজা?

 বেলতলী আর কদমার কাঁটাল। একখানা রসা একখানা খাজা। খাবেন রাত্তিরি?

 —আমি বুঝি বকাসু? এই খেয়ে এসে আবার যা পাব তাই খাবো?

 বিলু বললে—আপনি যদি না খান, তবে আমরা খেতে পাচিনে। অমন ভালো কাঁটালটা নষ্ট হয়ে যাবে পাক ওজর হয়ে। একটাও কোষ খান।

 —দিও রাত্রে।

 —না, এখুনি খেতে হবে, নিলু এখনই কাঁটাল খাবার জন্যি আমারে বলেচে। ছেলেমানুষ তো, নোলা বেশি।

 —ছেলেমানুষ আবার কি। ত্রিশের ওপর বয়স হতে চললো, এখনো—

 —থাক, আপনার আর তন্তর-শান্তর আওড়াতে হবে না। আমাদের সব দোষ, দিদির সব গুণ।

 ভবানী হেসে বললেন—আচ্ছা দাও, এক কোষ কাঁটাল খেলেই যদি তোমাদের খাওয়ার পথ খুলে যায় তো যাক।

 সন্ধ্যার পর তিলু এল ছোট ঘরখানাতে। বিলু দিয়ে গেল খোকাকে ওর মায়ের কাছে এ ঘরে। ভবানী বললেন—কেমন খেলে?

 —ভালো। আপনি?

 —খুব ভালো। তোমার বোনদের রাগ হয়েছে আমরা খেয়ে এলাম বলে। কি আনলাম না, ওরা রাগ করতেই পারে।

 —সে আমি ঠিক করে এনেচি গো, আপনারে আর বলতি হবে না। দুটো সরু চিড়ে ওদের জন্যি আনি নি বুঝি মামীমার কাছ থেকে চেয়ে? ওগো,

১৩২