পাতা:ইছামতী - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/২৯৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

লিখিতের?

 শঙ্কিত স্বরে লিখিত বললেন-কি হবে দাদা?

 শঙ্খ পরামর্শ দিলেন রাজার নিকট গিয়ে চৌর্যাপরাধের বিচার প্রার্থনা করতে। তাই মাথা পেতে নিলেন লিখিত। রাজসভার সব রকমের ত্রস্ত আহবান, আপ্যায়নকে তুচ্ছ করে, সভাসুদ্ধ লোকদের বিস্মিত করে লিখিত রাজার কাছে অপরাধের শাস্তি প্রার্থনা করলেন। মহারাজ অবাক। মহর্ষি লিখিতের চৌর্যাপরাধ? লিখিত খুলে বললেন ঘটনাটা। মহারাজ শুনে হেসে সমস্ত ব্যাপারটাকে ঠাট্টা বলে উড়িয়ে দিতে চাইলেন। লিখিত কিন্তু অচল, অটল। তিনি বললেন-মহারাজ, আপনি জানেন না, আমার দাদা জ্ঞানী ও দ্রষ্টা। তিনি যখন আদেশ করেচেন আমাকে শান্তি নিতে হবে, তখন আপনি আমাকে দয়া করে শাস্তি দিন। লিখিতের পীড়াপীড়িতে রাজা তৎকালপ্রচলিত বিধান অনুযায়ী তার দুই হাত কেটে দিতে আদেশ দিলেন। সেই অবস্থাতেই লিখিত দাদার আশ্রমে ফিরে গেলেন – ছোট ভাইকে দেখে শঙ্খ তো কেঁদে আকুল। তাকে জড়িয়ে ধরে বললেন-ভাই, কি কুক্ষণেই আজ তুই এসেছিলি আমার এখানে! কেনই বা লোভের বশবর্তী হয়ে তুচ্ছ একটা পেয়ারা পেড়ে খেতে গিয়েছিলি!

 ঠিক সেই সময়ে সুর্যদেব অস্তচূড়াবলম্বী হোলেন। সায়ং-সন্ধ্যার সময় সমুপস্থিত। শঙ্খ বললেন-চল ভাই, সন্ধ্যাবন্দনা করি।

 লিখিত অসহায়ভাবে বললেন-দাদা, আমার যে হাত নেই। শঙ্খ বললেন-সত্যাশ্রয়ী তুমি, ভুল করে একটা কাজ করে ফেলেছিলে, তার শান্তিও নিয়েচ। তোমার হাতে যদি সুর্যদেব আজ অঞ্জলি না পান, তবে সত্য বলে, ধর্ম বলে আর কিছু সংসারে থাকবে? চলো তুমি।

 নর্মদার জলে অঞ্জলি দেবার সময়ে লিখিতের কাটা হাত আবার নতুন হয়ে গেল। দুই ভাই গলা ধরাধরি করে বাড়ি ফিরলেন। পথঘাট তিমিরে আবৃত হয়ে এসেচে। শঙ্খ হেসে সস্নেহে বললেন-লিখিত, কাল সকালে কত পেয়ারা খেতে পারিস দেখা যাবে!

২৯৫